সেই মান্নানের বিরুদ্ধে দুদকের ১১০ কোটি টাকার মামলা
এক লাখ টাকা দিলে মাসে আড়াই হাজার টাকা লাভ এবং চার বছরে টাকা দ্বিগুণ। এমন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ দুজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া বৃহস্পতিবার বাগেরহাট সদর থানায় ওই মামলা করেন। একই ধরনের অপরাধের জন্য সেফ ইসলামিক ব্যবসায়ী কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাগেরহাট সদর থানায় করা মামলার অপর আসামি হলেন নিউ বসুন্ধরার চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান। মামলা নম্বর ২৭, তারিখ ৩০/০৫/২০১৯।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার টাকা নেওয়ার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২ (গ) ধারায় অপরাধ করেছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই অর্থ অর্জন করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ (ফ) (অ) ধারা অনুযায়ী আসামিরা এ অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে অপরাধ করেছেন। এ অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে কোম্পানির এমডি ও সহযোগীরা বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন। বৈধ প্রক্রিয়ায় তারা এ সম্পদ অর্জন করেননি বলে এ সম্পদ অবৈধ। অবৈধ সম্পদ অর্জন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ অনুয়ায়ী দুর্নীতির অপরাধ।
প্রতিষ্ঠানটি দালালদের মাধ্যমে এক লাখে মাসে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৫০ হাজার থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত বাগেরহাট খুলনা অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের বিপরীতে গ্রাহকদের লভ্যাংশ আকারে মাত্র ৭৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
নিউ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার নিজের পত্রিকায় স্বীকার করেছিলেন যে ৪০ হাজার গ্রাহক তাঁর কাছে মোট দুই হাজার কোটি টাকা আমানত রেখেছে। কিন্তু দুদকের তদন্তে শুধু মান্নান তালুকদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ৩০টি ব্যাংকে ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তকালে এসব অ্যাকাউন্টে ৬২ লাখ টাকা জমা ছিল। প্রতিটি টাকাই জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়েছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী এগুলো সন্দেহজনক লেনদেন। টাকাগুলো ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই টাকা সরিয়ে মান্নান তালুকদার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বেশ কিছু জমি কিনেছেন। কিছু টাকার জমি কেনা হলেও বাকি টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
এসবের বাইরেও শত কোটি টাকার ওপরে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে সরাসরি হাতে হাতে জনগণের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহারে এগুলোকেও মানিলন্ডারিং হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে একইভাবে খুলনার শিববাড়ী সেফ ইসলামিক ব্যবসায়ী কো-আপারেটিভ সোসাইটিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারাও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের মতো এক লাখ জমা দিলে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ এবং সাত বছরে তিনগুণ করার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের নাম মোক্তার হোসেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সেল এই প্রাথমিক তদন্তে একাধিক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পেয়েছে। এরই মধ্যে সমবায় অধিদপ্তর থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ ব্যাংকিং করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।