রাঙামাটিতে জেএসএস কর্মীকে গুলি করে হত্যা
রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে স্নেহাশীষ চাকমা নামের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-এমএন লারমা) এক কর্মী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের ইয়ারিংছড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জেএসএস (এমএন লারমা) উপজেলা সভাপতি অলঙ্গ চাকমা বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজে লংগদুতে আসেন স্নেহাশীষ কুমার চাকমা। গতকাল রাত ১২টার কিছু আগে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ইয়ারিংছড়ি গ্রামে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।’
অলঙ্গ চাকমা এ ঘটনায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস ও প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেন। যদিও জেএসএস (সন্তু লারমা) তা অস্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে ইউপিডিএফের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হত্যার দায় অস্বীকার করে জেএসএস (সন্তু লারমা) লংগদু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংস্কারপন্থীরা (জেএসএস-এমএন লারমা) আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জন কুমার সামন্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আসামিদের ধরতে অভিযানও চলছে।’
১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পার্বত্য জনপদে চলা অস্থিতিশীলতার অবসান হয়। সে সময় সন্তু লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনীর প্রায় দুই হাজার সশস্ত্র গেরিলা অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আসীন হন সন্তু লারমা।
এদিকে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষরের পরপরই সেটির বিরোধিতা করে প্রসীত খীসা, সঞ্চয় চাকমা ও দীপায়ন খীসার নেতৃত্বে গঠিত হয় চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ। সে সময় থেকে ২০০১৬ সাল পর্যন্ত সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস ও ইউপিডিএফের বিরোধে নিহত হন নেতাকর্মী সমর্থকসহ উভয় দলের অন্তত এক হাজার পাহাড়ি।
এর মাঝে ২০০৯ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে গিয়ে সুধাসিন্ধু খীসা, তাতিন্দ্রলাল চাকমা পেলে, রূপায়ন দেওয়ান জেএসএসের পৃথক ও নতুন একটি সংগঠন করেন। এটি জেএসএস-এমএন লারমা নামে পরিচিত।
অপরদিকে ২০১৬ সালে ইউপিডিএফ থেকেও কিছু নেতাকর্মী বের হয়ে গিয়ে তপনজ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে গঠন করেন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পৃথক আরেকটি সংগঠন। নতুন এই ইউপিডিএফের সঙ্গে জোট বাঁধে এমএনলারমার সংস্কারপন্থী জেএসএস।
অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পূর্বের বৈরিতা ভুলে অনানুষ্ঠানিকভাবে জোট বাঁধে সন্তু লারমার মূল জেএসএস ও মূল ইউপিডিএফ। চারটি আঞ্চলিক দল পৃথক দুটি জোটে ভাগ হয়ে বর্তমানে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।