জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনা খোঁজার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশে রপ্তানি-সংক্রান্ত নতুন নতুন খাত আবিষ্কারের জন্য জাপানের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য সম্ভাবনাময় খাত আবিষ্কারে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আমাদের দুই নেতৃত্বের মধ্যে বিদ্যমান বোঝাপড়া ও আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যে অসাধারণ সন্তুষ্টি বিদ্যমান থাকলে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো উচ্চস্তরে নেওয়া সম্ভব হবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাপানে রাষ্ট্রীয় সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার দেশটির হোটেল ওতানিতে বাংলাদেশ ও জাপানের ব্যবসায়ীদের একটি ফোরামে এ বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যয়, মানবসম্পদ, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার ও বাণিজ্য সুবিধার দিক বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ দ্রুত উদীয়মান এবং বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক স্থান।
‘গত বছরে জাপানের টোবাকোর ১.৪ মার্কিন ডলারের বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। জাপানের কাছ থেকে এমন আরো বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছি,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সাফল্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ হিসেবে চীনের পরে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তিনি বলেন, জাপানে প্রথম রপ্তানি পণ্যই হলো পোশাক। ২০১৮ সালে অন্য সব প্রতিযোগীকে ছাড়িয়ে এ খাতে ৩৩.৫ সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আমাদের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা দেখতে চাই। তাই রপ্তানিযোগ্য পণ্যের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত আবিষ্কারের জন্য আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
গুণগতমান সম্পন্ন ওষুধের জন্য বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশে এখন বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপসহ ১৪টি দেশে কার্গো ও যাত্রীবাহী জাহাজ সরবরাহ করছে বাংলাদেশ।
সফটওয়্যারকে বাংলাদেশের আরেকটি উদীয়মান খাত হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৮০০টি সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানির মধ্যে ১৫০টি বিশেষায়িত, যারা বিদেশি গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আইটি বিশেষজ্ঞ মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল ও সিস্কোসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অবগত হয়েছি যে জাপানের বাজারে আইটিইএস (আইটি সেবাসমূহ) পণ্যের বড় বাজার রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্য, পাটজাত দ্রব্য, বাড়ির যন্ত্রপাতি, হালকা প্রকৌশল পণ্য, চামড়াজাত দ্রব্যাদি, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বিশ্ব বাজারে একটি অবস্থান তৈরি করছে।
‘বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে, বাংলাদেশ থেকে পাট এবং বিকল্প পাটজাত পণ্যগুলোর বিপুল সম্ভাবনাগুলো তৈরি করবে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বেসরকারি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি এবং দেশটি দেশি ও বিদেশি উভয় দেশের উদ্যোক্তার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাপানের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অঞ্চলসহ সরকার সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ আজিজ খান বক্তব্য দেন।
অপরদিকে জাপানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড কোঅপারেশনের (জেবিসিসিইসি) চেয়ারপারসন তেরুও আসাদা, জাইকা এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুহিকো কোশিকাওয়া, জেইটিআরও প্রেসিডেন্ট ইয়াসুশি আকাহোশি, সুমিতোমো করপোরেশনের সভাপতি ও সিইও মাসায়াউকি হায়োডো, মিটসুই ও কো লি. এর ভাইস প্রেসিডেন্ট শাইনসুইক ফুজি, সজিটজ করপোরেশনের সিনিয়র ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ অফিসার রিওতারো হিরায়, মিটসুবিশি মোটরসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াউজিরো কোবাশি, হোন্ডা মোটর কো. লিমিটেডের ম্যানেজিং অফিসার নোরিয়াকি আবে ও মারুহিসা কোম্পাইন লিমিটেডের কিমিনোবু হিরায়শি বক্তব্য দেন।