ভুল তথ্যে নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছিল বৃষ্টি নামের সায়মা
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার মেয়রের জিম্মায় থাকা কিশোরী বৃষ্টির (১৩) প্রকৃত নাম সায়মা বেগম। সে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের সামসুদ্দিন শামসের মেয়ে। বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবাদুর রহমান খানের পালিত মেয়ে।
গত ১৬ মে বিকেলে দোকানে যাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে পালিয়ে আসে সায়মা। তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিন রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবাদুর রহমান খান। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে পরিবেশিত সংবাদ দেখে আজ সোমবার ভৈরবে ছুটে আসেন তাঁরা।
সঙ্গে আসেন এবাদুরের স্ত্রী মোমতাজ বেগম ও ছেলে বখতিয়ার আবিদ খান পলাশ। পরে এবাদুর খোঁজ নিয়ে ভৈরব পৌরসভার মেয়রের কার্যালয়ে আসেন এবং কিশোরী সায়মার সব ঘটনা অবহিত করেন। এ সময় তিনি জানান, কিশোরীর নাম বৃষ্টি নয়, প্রকৃত নাম সায়মা। পরে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন সায়মার প্রকৃত অভিভাবক নানা সাকিব মিয়া ও নানি সালেহা বেগমকেও।
এবাদুর রহমান খান জানান, কিছু দিন আগে তাঁর বাসা থেকে আড়াই লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল চুরি হয়। এ ঘটনায় বাসার কাজের মেয়ে মীমকে সন্দেহ করা হয়। মীম গত ১৬ মে সকালে কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। মীমের সঙ্গে সায়মার বেশ সখ্য ছিল। এ কারণে সেও খুব ভয় পায়। আর এ কারণেই ওই দিন বিকেলে সায়মাও দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
এবাদুর রহমান খান জানান, সায়মার নানা-নানি ভূমিহীন। তাঁরা তাঁর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চারাখালী গ্রামে থাকেন। তাঁদের ভরণ-পোষণও হয় তাঁর সহযোগিতায়। নয় বছর আগে তিনি সায়মাকে ও তার ছোট বোন ফাতেমাকে পালক নেন। তাঁর তিন ছেলে এবং এক মেয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের মেয়ের আদরে পালন করছেন।
সায়মার নানা সাকিব মিয়া ও নানি সালেহা বেগম জানান, সায়মা ও ফাতেমার মায়ের নাম রেহানা বেগম, বাবার নাম সামসুদ্দিন শামস। ২০০৯ সালে সামসুদ্দিন রেহানা বেগমকে গলাটিপে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এখনো তিনি পলাতক। তাই সায়মা ও ফাতেমার বাবা থেকেও নেই। এবাদুর রহমান খানের পরিবারই তাদেরসহ এই এতিম শিশু দুটিকে লালনপালন করছেন। সায়মা হারিয়ে যাওয়ার সংবাদে তাঁরা বেশ চিন্তায় ছিলেন। আজ ফিরে পেয়ে স্বস্তিবোধ করছেন বলেও জানান।
পালিয়ে আসা এবং নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করার বিষয়ে জানতে চাইলে সায়মা জানায়, ভয়ে সে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। সে জানায় ওই বাসায় গেলে তাকে নির্যাতন করা হবে। তাই সে ওখানে যেতে আগ্রহী নয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবাদুর রহমান খান জানান, কাজের মেয়ে মীমের টাকা আর মোবাইল চুরির বিষয়টি সায়মাকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। যদিও এ বিষয়ে সায়মাকে কোনো কিছুই জিজ্ঞাসা করার মানসিকতা তাদের ছিল না, এখনো নেই।
সব ঘটনা জানার পর ভৈরব পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ ভৈরব থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সায়মাকে কোনো প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ এবং শারীরিক-মানসিক নির্যাতন না করার অঙ্গীকারে আজ সোমবার বিকেলে নানা-নানির কাছে হস্তান্তর করেন।
গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে সায়মা নামের ওই কিশোরীকে বাসের দুই শ্রমিক ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ঘটনা চোখে পড়ে এক স্কুলশিক্ষিকার। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর গার্লস স্কুলের ওই শিক্ষিকা তখন মেয়েটির পরিচয় জানতে চেষ্টা করেন। তখন মেয়েটির কাছ থেকে তার সঠিক পরিচয় ও ঠিকানা জানতে না পারলেও, ভৈরবে তার বাড়ি বলায় তিনি ভৈরবে নিয়ে আসেন। ভৈরব এসে তিনি পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পৌর মেয়রের হেফাজতে মেয়েটিকে রেখে যান। সেখানেই সে আজ বিকেল পর্যন্ত ছিল।