বয়স ১২০, তবু মেলেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড!
নেত্রকোনার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের শিবাশ্রম গ্রামের বিধবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নিঃস্ব খুদ বানু। বয়স প্রায় ১২০ বছর। ৫০ বছর আগে স্বামী আবুল হাসেমকে হারিয়েছেন। তাঁর আপনজন বলতে কেউ নেই। অভাগা বৃদ্ধাকে দেখারও কেউ নেই। বয়সের ভারে অনেক আগেই কর্মশক্তি হারিয়েছেন। পেটের ক্ষুধা মেটাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতেই চলে তাঁর জীবন।
খুদ বানু খোলা আকাশের নিচেই পড়ে থাকতেন। সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে মাথা গোজার জন্য তাঁকে একটি ছোট ছাপড়া ঘর তৈরি করে দেয় এলাকাবাসী। সেখানেই তাঁর বসবাস। এ পর্যন্ত তাঁর কপালে বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি কোনো সাহায্য জোটেনি। বয়োজ্যেষ্ঠ খুদ বানুর কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছুই বলতে পারেন না। শুধু মাথা নাড়িয়ে ইশারা ইঙ্গিত করেন। যার কিছুই বুঝে ওঠা যায় না।
শিবাশ্রম গ্রামে বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনের ছাপড়ায় তাঁর বসবাস। ঘরে আসবাবপত্র বলতে একটি চৌকি। আর কিছুই নেই। ঘরের মেঝেতে গজিয়েছে বিভিন্ন ধরনের আগাছা। বসবাসের অযোগ্য ঘরেই থাকেন বৃদ্ধা খুদ বানু। নানা রোগে আক্রান্ত শরীর, দুর্গতির শেষ নেই।
পাশের ঘরের ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা জমিলা আক্তার বলেন, ‘আমার বয়স যখন সাত বছর তখন আমার মায়ের কাছে শুনেছি তাঁর (খুদ বানু) বয়স ৫৫। তাঁদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু কিছু দিন পর সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ভিক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করতে থাকেন। তাঁর আপনজন বলতে কেউ না থাকায় এলাকাবাসী তাঁর বসবাসের জন্য এ ঘরটি তৈরি করে দিয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য তাঁর ভাগ্যে জোটেনি।’
একই গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আবদুল কাদের বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই উনাকে এমন দেখে আসতেছি। উনার কেউ নাই। সরকারি কোনো সাহায্য দিলে হয়তো মৃত্যুর আগে মনে শান্তি পাইতেন।’
কাইটাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ রয়েল বলেন, ‘আমি শিবাশ্রম গ্রামের শতাধিক বয়সের নিঃস্ব খুদ বানুকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশীরা এই কার্ডের টাকা অন্য লোকজন নিয়ে যাবে বললে আমি তাঁকে কার্ড দেইনি। তবে মাঝেমধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে উনাকে সাহায্য করে থাকি।’
মদন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বয়স্ক ভাতার কার্ড এমন বয়সেও পাননি তা আমার জানা ছিল না। ইউপি চেয়ারম্যান বৃদ্ধা খুদ বানুর প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মদন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি গত ৬ মে দায়িত্ব পেয়েছি। এর আগেই সব কার্ড বণ্টন হয়ে গেছে। তবু চেষ্টা করব এই বৃদ্ধ মহিলার জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড জরুরি ভিত্তিতে করে দেওয়ার জন্য।