তরুণদের স্বপ্নভঙ্গ, নেমপ্লেটবিহীন বাইকে ‘ছিনতাই’
বাজারে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যেকোনো নতুন পণ্য এলে তার ভিডিও রিভিউ বানায় ‘অ্যানড্রয়েড টোটো কোম্পানি : এটিসি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মুঠোফোন, ল্যাপটপ কিংবা ডিএসএলআর ক্যামেরার ভালো-মন্দ তথ্য ভিডিও রিভিউর মাধ্যমে তুলে ধরে ক্রেতাদের পণ্য কেনার পথ সহজ করে দেয় এই প্রতিষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এসব পণ্যের ভিডিও রিভিউ বানিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
পাঁচ বছর আগে পাঁচ বন্ধু মিলে এটিসি নামে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অনেকটা শখের বশে গড়ে তুললেও এখন সব মিলিয়ে ৩৩ জন এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটির সব সদস্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের আগ্রহ আর অভিজ্ঞতায় কিছুটা আর্থিক লাভের মুখও দেখতে শুরু করেছেন এটিসির সদস্যরা।
তবে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী মিরপুর ৬০ ফিট রোডের আমতলা বাজারে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে ম্লান হতে বসেছে এসব তরুণের স্বপ্ন।
ছিনতাইকারীরা দুটি ক্যামেরা, দুটি লেন্স, একটি নতুন স্মার্টফোন ও কিছু তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যসহ মোট আড়াই লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা আশিকুর রহমান তুষার। তিনি বলেন, আমাদের এটিসির দুজন সদস্য মিরপুর ৬০ ফিট সড়ক দিয়ে রিকশায় করে মিরপুর ২ নম্বর সেকশন এলাকায় ভিডিও রিভিউ বানাতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল থেকে একজন ছোঁ মেরে কাছে থাকা ক্যামেরার ব্যাগটি ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায়। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নেমপ্লেট ছিল না। তবে আমরা ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া লোকদের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু মাথায় হেলমেট থাকায় তাদের চেনা যাচ্ছে না।
আশিকুর রহমান তুষার আরো বলেন, পাঁচ বছর ধরে তিলে তিলে ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করিয়ে আজ এখানে নিয়ে এসেছি। আমাদের টিমের প্রত্যেক সদস্যই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অথচ ছিনতাইকারীদের একমুহূর্তের ছোবলে আমাদের অন্তত ৩৩ তরুণের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। পুলিশ আন্তরিক হলে ছিনতাইকারীদের ধরা সম্ভব। এতে আমাদের ভেস্তে যাওয়া স্বপ্ন নতুন করে দেখতে পারব।
ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় রিকশায় থাকা এটিসির সদস্য জুলফিকার রহমান রিফাত বলেন, কিছু বলার নেই। এই রকম একটি ঘটনা ঘটবে, ভাবতেও পারেনি। রোজা রাখা সুন্দর সকালটা এক নিমেষেই দুঃখে পরিণত হলো। মিরপুর ৬০ ফিট থেকে রিকশায় করে পিৎজাবার্গে আইটেলের একটি মুঠোফোনের ভিডিও রিভিউ বানাতে যাচ্ছিলাম। ক্যামেরা-লেন্স, মোবাইল সব একটা ক্যালো ব্যাগে আমার কাছে ছিল। মনিপুরের একটু আগে ইফা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে হঠাৎ একটা মোটরবাইক এসে আমাদের ক্রস করে যাওয়ার সময় হাত থেকে ছোঁ মেরে ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত সামনে চলে যায়। ছিনতাইয়ের সময় পেছন থেকে ব্যাগ টান দিলে আমি রিকশা থেকে পড়ে যাই। সামনে তাকালে দেখতে পাই মোটরসাইকেলটিতে কোনো নম্বরপ্লেট নেই। পরে আরেকজন মোটরসাইকেল আরোহীর সাহায্য নিয়ে ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলটির পেছন পেছন যেতে থাকি। কিন্তু তারা দ্রুত গলির ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় ছিনতাইকারীদের শেষ পর্যন্ত ধরতে পারিনি।
রিফাত আরো জানান, ব্যাগে সনি আলফা এ৬৩০০, সনি আলফা এ৬৫০০ মডেলের দুটি ক্যামেরা, কিট ও সিগমা লেন্স, পাওয়ার ব্যাংক, আইটেল স্কাইপি মডেলের মুঠোফোন এবং আরো কিছু প্রযুক্তিপণ্য ছিল ব্যাগটিতে। ছিনতাইকারীদের দুজনের মাথায় কালো রঙের হেলমেট ছিল, পেছনে থাকা ছিনতাইকারীর পরনের ছিল কালো শার্ট ও কমলা রঙের প্যান্ট।
তবে ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে নেমপ্লেট না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আইনের ভাষায় এটা ছিনতাইয়ের মধ্যে পড়ে না। কোনো ব্যক্তিকে জোর করে কোনো কিছু কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো কিছু নিয়ে গেলে সেটাকে আমরা ছিনতাইয়ের মধ্যে ধরব। তবে গতকাল মনিপুর এলাকায় যেটা ঘটেছে সেটা ছিনতাই নয়, চুরি। চলন্ত অবস্থায় কোনো কিছু টান দিয়ে নিয়ে গেলে এটা চুরির মধ্যেই পড়ে। তারপরও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’