তানিয়াদের বাড়িতে আফরোজা আব্বাস, চাইলেন দৃষ্টান্তমূলক বিচার
চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর নার্স শাহীনূর আক্তার তানিয়াকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
আজ সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে নিহত নার্স তানিয়ার বাড়িতে যান আফরোজা আব্বাস। তিনি তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং আর্থিক সহায়তা হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা দেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, কটিয়াদি উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান কাঞ্চন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, ছাত্রদলের জেলা সভাপতি মারুফ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স তানিয়া গত ৬ মে বিকেলে নিজ বাড়িতে আসার জন্য ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে রওনা হন। বাসটি কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড় গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে পৌঁছার পর বাসের চালক ও সহকারীসহ অন্যরা শাহীনূরকে ধর্ষণ করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওই এলাকা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর রাত পৌনে ১১টার দিকে তানিয়াকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
পরের দিন বিকেলে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নার্স শাহীনূর আক্তার তানিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সারোয়ার জাহান ৮ মে দুপুরে পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিরা হচ্ছেন বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু, চালকের সহকারী লালন মিয়া, রফিকুল ইসলাম রফিক, খোকন মিয়া ও বকুল মিয়া। শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আল মামুন আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের চার দিনের মাথায় ১১ মে তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আল মামুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
১২ মে রোববার কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিহত তানিয়ার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে বলা হয়, গণধর্ষণের পর মাথায় আঘাত করে নার্স শাহীনূর আক্তার তানিয়াকে হত্যা করা হয়। তাঁর শরীরে ১০টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
রোববার সকালে ঘটনাস্থল বাজিতপুর ও কটিয়াদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তানিয়া ধর্ষণে নিজেসহ তিনজনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নূরু। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।