গণধর্ষণের পর মাথায় আঘাত করে নার্স তানিয়াকে হত্যা করা হয়
কিশোরগঞ্জে গণধর্ষণের পর মাথায় আঘাত করে নার্স শাহীনূর আক্তার তানিয়াকে হত্যা করা হয়। তাঁর শরীরে ১০টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ রোববার কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিহত তানিয়ার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু রিমান্ডের চার দিনের মাথায় গতকাল শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আল মামুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থল বাজিতপুর ও কটিয়াদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তানিয়া ধর্ষণে নিজেসহ তিনজনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নূরু। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, তানিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজশাহী ও কুড়িগ্রামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন আজ দিনভর ঘটনাস্থল বাজিতপুর ও কটিয়াদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, জেলার পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদসহ অনেকে। বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ডিআইজি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ছবি : এনটিভি
ডিআইজি বলেন, রিমান্ডে নেওয়া বাকি চার আসামিকেও জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদের আটকে সর্বাত্মক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ধিকৃত এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত আছে, তাদের কেউ ছাড় পাবে না। অহেতুক যেন কাউকে হয়রানি না করা হয়, এ ব্যাপারেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের যেন বিচার হয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আজ নিহত তানিয়ার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন ডা. হাবীবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। ওই প্রতিবেদনে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে ডা. হাবীবুর রহমান জানান, ময়নাতদন্তে নিহতের শরীরের ১০টি স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে, ধস্তাধস্তির কারণেই এই জখম হয়েছে। তা ছাড়া নিহতের যৌনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণের আলামত ও পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, ভিকটিমকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে শক্ত আঘাতের কারণে তানিয়ার মাথার পিছন দিকের খুলির হাড় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এ আঘাতের কারণে ব্যাপক রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স তানিয়া গত ৬ মে বিকেলে নিজ বাড়িতে আসার জন্য ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে রওনা হন। বাসটি কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড় গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে পৌঁছার পর বাসের চালক ও সহকারীসহ অন্যরা শাহীনূরকে ধর্ষণ করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওই এলাকা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর রাত পৌনে ১১টার দিকে তানিয়াকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
পরের দিন বিকেলে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নার্স শাহীনূর আক্তার তানিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সারোয়ার জাহান ৮ মে দুপুরে পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিরা হচ্ছেন বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু, চালকের সহকারী লালন মিয়া, রফিকুল ইসলাম রফিক, খোকন মিয়া ও বকুল মিয়া। শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আল মামুন আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।