ভূমধ্যসাগরে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সিলেটের ৫ যুবক
দালালের পাল্লায় পড়ে অনেক দেশ ঘুরে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে সিলেটের পাঁচ যুবক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন ফেঞ্চুগঞ্জ এবং একজন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া পাশের মৌলভীবাজার জেলারও একজন রয়েছে।
গতকাল শনিবার এই সংবাদ পাওয়ার পর থেকে এই ছয়জনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের মধ্যে পরস্পরের আত্মীয়ও রয়েছেন। একই নৌকায় থাকা বেঁচে যাওয়া সিলেটের অন্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে পরিবারগুলো জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কটালপুর এলাকার মহিদপুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ, একই গ্রামের মন্তু মিয়ার ছেলে আহমদ হোসেন, সিরাজ মিয়ার ছেলে লিটন সিকদার, দিনপুর গ্রামের আফজাল মাহমুদ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার কামরান আহমেদ মারুফ।
ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত হন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শামীম (ডানে) তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গে। ছবি : এনটিভি
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের বাদে ভুকশিমইল গ্রামের মৃত আবদুল খালিকের ছেলে হাফিজ আহসান হাবিব শামীমও ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারিয়েছেন। শামীম সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদের ছোট ভাই। নিহত শামীম ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার কামরান আহমেদ মারুফ পরস্পরের আত্মীয়। মারুফের ভগ্নিপতি হচ্ছেন শাহরিয়ার আলম সামাদ।
নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মহিদপুর গ্রামের বিলাল আহমেদ ফোন করে সঙ্গীদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিলাল নিহত লিটন ও আজিজের চাচা হন।
ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৬৫ জন অভিবাসীর অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশি। এ ছাড়া ওই নৌকাডুবিতে যে ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়, তার ১৪ জনই বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। তিউনিসিয়া রেড ক্রিসেন্টের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানান, ওই নৌকায় অন্তত ৫১ বাংলাদেশি ছিলেন। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে মিসরের তিনজন, মরক্কো, শাদ ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের আরো কয়েকজন নাগরিক ছিলেন।
বিবিসি জানায়, দুর্ঘটনার শিকার নৌকাটি গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার জুয়ারা শহর থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়। এর মধ্যে গভীর সাগরে যখন তাঁদের বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় তোলা হয়, তার কিছুক্ষণ পরই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মুখে নৌকাটি ডুবে যায়।
ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত হন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার চার যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছবি : এনটিভি
এদিকে, নৌকাডুবির পর তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে জারজিজ শহরের তীরে নিয়ে যান। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানান, সাগরের ঠাণ্ডা পানিতে প্রায় আট ঘণ্টা ভেসে ছিলেন তাঁরা।
নিহত আবদুল আজিজের ভাই মফিজুর রহমান আজ রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদম ব্যবসায়ী মো. এনামুল হক তাদের ভারত, শ্রীলঙ্কা, লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছানোর কথা বলে সাড়ে সাত লাখ টাকা নেয়। কিন্তু এনামুল লিবিয়ায় থাকা আদম ব্যবসায়ীদের টাকা না দেওয়ায় ৪০ জনের নৌকায় ৮৬ জনকে তোলে দালালচক্রটি।
অতিরিক্ত মানুষ হওয়ায় নৌকাটি সমুদ্রে ডুবে ভাইসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান মফিজুর রহমান। তিনি এ জন্য সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজ’-এর মালিক মো. এনামুল হককে দায়ী করেন।
নিহত শামীমের বড় ভাই শাহরিয়ার আলম সামাদ জানান, ইতালিতে যাওয়ার জন্য তিন মাস আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন শামীম আহমদ। পরে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান তিনি। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম ছিলেন সবার ছোট।