অশীতিপর রাবেয়াসহ তিনজনের মামলার কার্যক্রম স্থগিত
দীর্ঘ দেড় যুগেও বিচার শেষ না হওয়ায় বৃদ্ধ রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে এই মামলায় বিচারে বিলম্ব কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারককে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘আশরাফুল আলম নোবেল নামের এক আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১২ মে মামলাটি শুনানির জন্য আসবে।’
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘অশীতিপর রাবেয়া : আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ এই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বৃদ্ধার বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেই। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে, তাও জানি না। পুলিশরে শরবত, মোরব্বা বানাই খাওয়াছি। তারপরও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না। মরতে চাই। অনেকদিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।’
অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অভিযোগে তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন ২০০২ সালের ২ জুন। মামলা নম্বর ১৯৩৮/০২। এরপর তিনি গ্রেপ্তার হন, ছয় মাস কারাগারে থেকে জামিনও পান। পরে তাঁকেসহ দুই আসামি জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ শুরু হয় মামলার বিচার।
তেজগাঁও থানা এলাকার ৩/ক গার্ডেন রোড, কাজী আবদুল জাহিদের ঘরের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাবেয়া খাতুনকে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয়টি গুলি উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। সেই মামলা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকার আদালতের বারান্দায় ১৮ বছর ধরে ঘুরছেন এই অশীতিপর মানুষটি।
রাবেয়ার আদালতে হাজিরার দিন ছিল গত বুধবার। যথাসময়ে সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি ঢাকা মহানগর ১ নম্বর অতিরিক্ত জজ আদালতের দোতলায় লাঠিতে ভর দিয়ে হাজির হন। পরনে ম্যাক্সি ও চোখে চশমা। এক হাতে পানের পলিথিন ব্যাগ, সঙ্গে মোবাইল। হাজির হন এজলাস কক্ষের পেছনের বেঞ্চে। ন্যুব্জ হয়ে গেছেন বয়সের ভারে। পরিচয় দিয়ে মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি, ‘কেউ যদি আমাকে গলা কেটে মেরে ফেলত তাও শান্তি পেতাম। এই যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না।’