পায়েলের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে সাক্ষ্য দিলেন মা
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় বাদীসহ পাঁচ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবদুল হালিমের আদালতে সাক্ষ্য দেন নিহতের মা কোহিনুর বেগম।
আদালতে কোহিনুর বেগম তাঁর ছেলে পায়েল হত্যায় খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোহিনুর বেগম বলেন, গত বছরের ২১ জুলাই ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ব্রিজ থেকে আহত পায়েলকে নদীতে ফেলে দেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসচালকসহ তিন কর্মী। এ সময় পায়েলের একবন্ধু বাসে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। বাস থেকে নামার সময় তারা পায়েলকে না পেয়ে তাঁর মাকে ফোন করেন।
মামলার বাদী পায়েলের মামা ফাহাদ চৌধুরী জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল ও তাঁর বন্ধু রাতে হানিফের একটি এসি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। গজারিয়ার ভবেরচর এলাকায় বাস যানজটে পড়লে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাস থেকে নামেন পায়েল। যানজট ছেড়ে বাস চলা শুরু হয়। পায়েল দ্রুত ওঠার চেষ্টা করলে বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন। এ সময় হানিফের বাসচালক, সুপারভাইজার ও হেলপার পায়েলকে মহাসড়কের পাশের খালে ফেলে দেন।
২৩ জুলাই গজারিয়ার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। এরপর হানিফের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তাঁর সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতে তাদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গজারিয়ার ভবেরচরে যানজটে পড়ায় প্রসাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে সেতু থেকে পাশের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে যান চালক ও সুপারভাইজার।
মামলার বাদী গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব জানান, পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার আগে পরিচয় লুকাতে হানিফ পরিবহনের বাসের চালক মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন।
সাইদুর রহমান পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা ও বড় ভাই গোলাম মোস্তফা কাতার প্রবাসী। বড় ভাইয়ের সন্তান হওয়ার খবরে জুলাই মাসে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন পায়েল। চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় তাঁদের বাসা।
পায়েলের মৃত্যুর পর তাঁর মামা বিপ্লব বাদী হয়ে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামি করে গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। গজারিয়া থানার পুলিশ ওই তিনজনকে আসামি করে ৩ অক্টোবর অভিযোগপত্র জমা দেয়। মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। পরে পায়েলের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর মামলার বিচারকাজ শুরু হয় চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।