ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব
আইসিডিডিআরবিতে ঘণ্টায় আসছেন ৩৫ রোগী
এই মৌসুমে সারা দেশে সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায়। প্রতিদিন বিপুল রোগী ডায়রিয়ার কারণে শরণাপন্ন হচ্ছেন চিকিৎসক ও হাসপাতালের। অনেক হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ে হচ্ছে না স্থান সংকুলান। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে একই অবস্থা দেখা যায় রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি)। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় সুচিকিৎসা না পেয়ে ঢাকা ও এর আশপাশের মানুষ ছাড়াও সারা দেশের মানুষ ছুটে আসে এখানে। ফলে অন্য যেকোনো হাসপাতালের চেয়ে এখানে রোগীর ভিড় সবচেয়ে বেশি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন প্রায় ৮০০ নতুন রোগী ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি হচ্ছে আইসিডিডিআরবিতে। হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। এখন পার্কিং এলাকায় তবু খাঁটিয়ে রোগী ভর্তি করেও সব রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অভাব দেখা দিয়েছে সিটের।
আইসিডিডিআরবি জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রোগী এসে ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। তবে বেশিরভাগ রোগীই ঢাকার জুরাইন, মোহম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, টঙ্গী ও মিরপুরের।
বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র এ তিনদিনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এর মাঝে অর্ধেকের বেশি রোগী প্রাপ্তবয়স্ক আর বাকি অংশ শিশু। শুক্রবারসহ গত চার দিনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩৫ জন করে রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে ভর্তি আছেন ৭০ জন রোগী। এ ছাড়া আইসিইউতে ভর্তি আছে ১০ শিশু।
হাসপাতালে ভর্তি রাজধানীর জুরাইন এলাকার শিশু নাহিলা আক্তারের (৬) মা রহিমা খাতুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অবস্থা কাহিল, তাতে আবার আমাদের জুরাইনের পানির অবস্থা ভয়ানক। পানিতে গন্ধ। ফুটানোর আগে পানি বোতলে রাখলে নিচে কালো কালো ময়লা জমে যায়। এই পানি খেলে ডায়রিয়া তো হবেই। আমার বাচ্চাটার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
হাসপাতালে ভর্তি বয়স্ক আরেক রোগী রহিমুন নেছা বেগমের (৯৫) মেয়ে হাবিবা বলেন, ‘সোমবার রাত ৩টার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। অবস্থা ভালো না বুঝে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার সময় মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। মায়ের শরীর প্রচণ্ড ব্যথা। কথা বলতে পারেন না বলে হাত নেড়ে নেড়ে দেখাচ্ছেন। আমরা আজ নিয়ে চারদিন এখানে আছি। পুরোপুরি সুস্থ হননি এখনো তবে আগের চেয়ে ভালো অবস্থা।’
ময়মনসিংহ থেকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আবুল কালাম (৫৫)। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু কিছুই হচ্ছিল না। তাই এখানে এসে ভর্তি হয়েছি। এখন অবস্থা একটু ভালো।’
এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরো ১৫ রোগীর সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। এদের মাঝে আইসিইউতে থাকা শিশু রহিতুল ইসলামের মা রাহিলা বলেন, ‘তিন ধরে অবস্থা খুবই খারাপ। ঠিক হচ্ছে না। আল্লাহ ভরসা, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
হাসপাতালে উপচেপড়া রোগীদের ভিড় ও চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান চিকিৎসক আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৮০০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। এদের ভেতর ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক আর বাকি অংশ শিশু। আমাদের হাসপাতালে রোগী ধারণক্ষমতা ৩৫০ জনের মতো। যদিও একটু কষ্ট করে করিডোরসহ সব স্থানে রোগী রেখে আমরা ৬৫০ জনের সেবা দিতে পারি। কিন্তু গত ১০ দিনে রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’
‘রোগীর চাপ বেশি হয়ে যাওয়ায় আমরা পার্কিংয়ের জায়গায় একটি তাবু বানিয়ে ৯০ জনের চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রয়োজন হলে আরো তাবু খাঁটাতে চেষ্টা করব। প্রতি বছর এ সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এটাই ডায়রিয়ার মৌসুম। অতিরিক্ত গরমে অন্যান্য সমস্যাগুলো যোগ হয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ঢাকার রোগীই বেশি আমাদের হাসপাতালে। এখানকার অধিকাংশ এলাকার পানির অবস্থা খুব খারাপ। এদিকে খাদ্যে ভেজাল তো আছেই। সব মিলিয়ে এ অবস্থা’, বলেন আজহারুল ইসলাম।