সংসদে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির’ কথা বলবেন জাহিদুর
দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেছেন, তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলবেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল-পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য এসব কথা বলেন।
তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যাঁরা শপথ নেন, তাঁরা ‘জনদুশমন’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সময়মতো তাঁদের বিচার হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতীয় সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো সংসদে আসা জাহিদুর রহমান জাহিদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ নিরপরাধ নেতাকর্মী তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এই মিথ্যা মামলার প্রত্যাহারের জন্য আমি সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাব যে আপনি দেখেন।’
‘কারণ, এইগুলোর বাদী হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ যা করেছে, সব মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) লোক কোনো মামলা করেনি। কাজেই আপনার এটা দেখা উচিত। গণতন্ত্রের স্বার্থে সেইসব মামলা প্রত্যাহার করার আমি দাবি রাখব।’
জাহিদুর আরো বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে আমার নেত্রীকে (বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া), এজন বয়স্ক মহিলা, ৭৩ বছর বয়স, উনাকে যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে মুক্ত করে দেয়, এই আহ্বান আমি জানাব সংসদে। এটাই আমার প্রথম অঙ্গীকার।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দল নিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রায় সবাই বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে বিএনপি থেকে ছয়জন ও গণফোরাম থেকে দুজনসহ মোট আটজন নির্বাচিত হন।
এর মধ্যে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজারের একটি আসন থেকে এবং সিলেটের একটি আসন থেকে ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন মোকাব্বির খান।
নির্বাচনের পর পরই ভোটে ব্যাপক কারচুপি আর অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাঁরা শপথ নিবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গণফোরামের দুজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। পরে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সুলতান মনসুরকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তৃতীয় এবং বিএনপির প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল-পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। জাহিদুর ১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচন করছেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি পাস করতে পারেননি। এ নিয়ে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৫ জন শপথ নিলেন। এখন বাকি আছেন বিএনপির পাঁচ নির্বাচিত প্রতিনিধি।
এবারের নির্বাচনে জাহিদুর রহমান ৮৮ হাজার ৫১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। রংপুর বিভাগে তিনিই বিএনপির একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমদাদুল হক। তিনি ৮৪ হাজার ৩৮৫ ভোট পান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী মো. ইয়াসিন আলী নৌকা মার্কায় ৩৮ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ লাঙ্গল প্রতীকে পান ২৭ হাজার ১৮২ ভোট।