গরুচোর সন্দেহে ২ যুবককে পেটালেন ইউপি সদস্য, ভিডিও ভাইরাল
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় গরুচোর সন্দেহ দুই যুবককে বেধড়ক পিটিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। গরু চুরির মামলায় ওই দুই যুবক বর্তমানে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
গত ১৩ এপ্রিল গফরগাঁওয়ের উস্তি ইউনিয়নের বড় গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পরবর্তী সময়ে ওই মারপিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মারধরের শিকার ওই দুই যুবক হলেন বড় গ্রামের অটোরিকশাচালক বাদল মিয়া ও কুমিল্লার হিমেল মিয়া। উস্তি ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম তাঁদের ‘গরুচোর’ বলে মারধর করেন।
এদিকে বাদলের পরিবার ও স্থানীয় অনেকের দাবি, বাদল ও হিমেল গরুচোর নন। মূলত বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় কাশেমের পক্ষ না নেওয়ায় বাদল ও হিমেলকে মারধর করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ বুধবার কাশেম বলেন, ‘১৩ এপ্রিল ভোরে ওই দুই যুবককে গরুসহ আটক করে লোকজন। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁদের গণধোলাই দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি, তাই জনগণকে শান্ত করতে সে সময় ওদের কয়েকটা চড়থাপ্পড় দিয়েছে। ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে ততটা আমি করি নাই।’
ইউপি নির্বাচনের সময় পক্ষে না নেওয়ায় ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে বাদল ও হিমেলকে মারধর করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ আছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বলেন, ‘সব ভুয়া কথা।’
উস্তি ইউপি সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম তোতা মিয়া কাশেমের মারধরের ঘটনার নিশ্চিত করে বলেন, ‘কাশেম মেম্বার সরকারি দলের সক্রিয় কর্মী ও প্রতিবাদী। হয়তো জনগণকে শান্ত করার জন্য ওই দুজনকে মারধর করেছেন কাশেম। তবে এতটা মারধর করা ঠিক হয়নি। আমি ভিডিওটা দেখেছি।’
এদিকে পিটুনির ঘটনায় বাদলের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার আজ গফরগাঁওয়ের পাগলা থানায় মামলা করেছেন। এতে কাশেমের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, তাঁর স্বামী বাদল মিয়াকে রাতে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে পাল্টিপাড়া রমজান শেখের বাড়ির সামনে নিয়ে যান আসামিরা। সেখানে তাঁকে দেখামাত্র গরুচোর আসছে বলে স্বামীকে ধরে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে গাছের ডাল দিয়ে অমানবিকভাবে মারধর করে। তাঁর স্বামী একজন অটোরিকশাচালক, তিনি চোর নন।
এ ব্যাপারে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুর রহমান বলেন, ‘ওই দুই যুবককে মারধর করে গরু চোর হিসেবে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন আবুল কাশেম। গরু চুরির মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাঁদের চালান করা হয়। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে আছেন।’
‘তাঁদের নামে এর আগে থানায় গরু চুরির আর কোনো মামলা পাওয়া যায়নি। মারধরের ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ বলেন ওসি।