মানিকগঞ্জে ৪ বছর ধরে ধর্ষণ, যুবলীগ নেতা কারাগারে
মানিকগঞ্জে চার বছর ধরে এক নারীকে ‘আর্থিকভাবে জিম্মি করে ধর্ষণ’ করা হয়। সেই সঙ্গে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে অন্যদের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হয়।
এই অভিযোগে করা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মো. আলী হোসেন উজ্জ্বল (৪০) রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, তারা আদালতের কাছে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। আদালত কাল শুনানির দিন ধার্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
আসামি আলী হোসেন উজ্জ্বল জেলার ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। তিনি বিবাহিত। এলাকায় তাঁর স’ মিল, রাইস মিল ও ফার্নিচারের দোকান রয়েছে।
এদিকে, নির্যাতিত ওই নারীর পরিবার ন্যায়বিচার এবং জান-মালের নিরাপত্তারে জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, আসামি উজ্জ্বল ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় নালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মাখনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মামলা নিয়ে বেশি ঘোরাঘুরি করতে বারণ করেছেন। নইলে পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে তাদের হুমকি দিচ্ছেন।
ওই নারী গত ১৬ এপ্রিল রাতে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। বাদীর বক্তব্য ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই নারী তাঁর এলাকার বিভিন্ন সমিতি ও এনজিওর সদস্য। একই এলাকায় ব্যবসা করেন মো. আলী উজ্জ্বল। তিনি স’মিল, রাইস মিল ও ফার্নিচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায় প্রয়োজনেই ওই নারীর সঙ্গে উজ্জ্বলের পরিচয় হয়।
একপর্যায়ে উজ্জ্বল ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ওই নারীকে সমিতি থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে দিতে বলেন এবং এর জন্য কিস্তির বাইরে কিছু লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেন তিনি। ওই নারী আর্থিক লাভের আশায় নিজের নামে বিভিন্ন সমিতি থেকে প্রায় সোয়া আট লাখ টাকা ঋণ করে উজ্জ্বলকে দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উজ্জ্বল কিস্তির টাকা পরিশোধ কিংবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লভ্যাংশের টাকা পরিশোধ করার ব্যাপারে গড়িমসি করতে থাকেন।
এদিকে কিস্তির টাকা না পেয়ে সমিতির লোকজন ওই নারীকে চাপ দিতে থাকেন। এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পরে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি, সংসারে দেখা দেয় অশান্তি। তখন বাধ্য হয়ে ওই নারী ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে উজ্জ্বলকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু উজ্জ্বল টাকা পরিশোধের ব্যাপারে অনড় থাকেন।
একপর্যায়ে উজ্জ্বল ওই নারীকে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার বিনিময়ে ঋণের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ওই নারী ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে উজ্জ্বলের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হন বলে মামলায় উল্লেখ করেন।
ওই নারীর অভিযোগ, উজ্জ্বল ধীরে ধীরে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধ করেননি; বরং তাঁর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন ওই ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, তাঁর হুমকির কারণে বিভিন্ন সময় অন্য অনেক লোকের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করা হয়েছে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মামলায় ওই নারী আরো অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ের ওপরও উজ্জ্বলের নজর পড়ে। মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করতে না দিলে উজ্জ্বল ওই নারীর স্বামীকে সব ঘটনা জানিয়ে দেবেন এবং তাঁর গোপন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন বলে হুমকিও দেন।
‘প্রাণনাশের হুমকিসহ একের পর এক সামাজিক মর্যাদাহানির হুমকিতে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যাই,’ যোগ করেন ওই নারী। তিনি আরো জানান, এ অবস্থার মধ্যেই নিরুপায় হয়ে উজ্জ্বলের কথামতো গত ১৬ এপ্রিল দুপুরে মেয়েকে নিয়ে মানিকগঞ্জের উত্তর সেওতা এলাকার মনিরা বেগম মনোয়ারা নামের এক নারীর চারতলা বাড়ির চিলেকোঠায় যান তিনি।
সেখানে উজ্জ্বল প্রথমে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন এবং পরে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হন। কিন্তু এরই মধ্যে ওই বাড়িতে অপরিচিত নারী-পুরুষের আনাগোনা হওয়ায় সন্দেহের ফলে স্থানীয় কিছু লোক খোঁজখবর করতে যান। সে সময় এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে নিজের মোবাইল ফেলে উজ্জ্বল পালিয়ে যান বলে অভিযোগে জানানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম বলেন, আলী উজ্জ্বলের অপকর্মে সহায়তার অভিযোগে আরেক আসামি ওই বাড়ির মালিক মনিরা বেগম মনোয়ারাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বুধবারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় মেডিকেল রিপোর্ট পাঠানো হবে।