‘যত্রতত্র আর মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেবে না সরকার’
শিক্ষার মান নিশ্চিত না হয়ে যত্রতত্র আর মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেবে না সরকার। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৯ উদ্বোধন করে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী রোগীদের সেবায় চিকিৎসকদের আরো যত্নবান হওয়ার তাগিদ দিয়ে, সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর ফলে কমেছে মাতৃমৃত্যুর হার, হ্রাস পেয়েছে শিশুমৃত্যুও। সরকারের হিসাব বলছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। তার মধ্যে নতুন নতুন রোগ আর সংক্রামকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকছে মানুষ।
তাই সরকারের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আরো জোরদার করতে দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হলো পাঁচদিনব্যাপী জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি সপ্তাহ। ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিকার, শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ এ স্লোগানে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আরো বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য খাতে তাঁর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সারা দেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন সাড়ে তিন লাখ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। বিশেষায়িত নার্স গড়ে তোলার পাশাপাশি নার্সিং সেবায় শুধু বিজ্ঞান নয় যাতে যেকোনো বিষয়ে পড়ালেখা করে আসতে পারে সেবিষয়েও ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনা করা হবে কতজন ছাত্র, কতজন শিক্ষক এবং শিক্ষার মানটা কতটুকু হবে। সেসব বিবেচনা করেই করা হবে। আমাদের কিছু কিছু অভ্যাস আছে, একটা জিনিস যখন শুরু হয় সবাই সেটা করতে থাকে। সেভাবে যত্রতত্র করতে দেওয়া যাবে না, মানসম্মত হতে হবে। শিক্ষাদানটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে বৃহত্তর প্রচারণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জনসাধারণের পুষ্টিকর খাবার ও সুষম খাদ্য গ্রহণের জন্য একটি বৃহত্তর প্রচারণা চালানো জরুরি। আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে মানুষ বিভিন্ন রোগে প্রভাবিত না হয়।’
প্রথমবারের মতো দেশে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে, যার স্লোগান হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য সেবার অধিকার, শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে, যাতে মানুষ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে। আজ, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভেষজ, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উপেক্ষা করতে পারি না এবং মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এগুলোর উন্নয়নের জন্য আরো গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মান সম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সফল্য অর্জন করেছে এবং বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি চিরায়ত ওষুধেরও ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও জিপগাড়ি বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আশাদুল ইসলাম।