পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে জমজমাট কেনাকাটা
বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলো। হুমড়ি খেয়ে পড়া ক্রেতার ভিড়ে স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও হকার্স মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই লাল-সাদা পোশাক কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রিপিস, চুরিসহ বিভিন্ন গয়নার পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিনে বেচাকেনা ভালো না হলেও বুধবার থেকে বেশ উপচে পড়া ভিড়। বিক্রিও ভালো। গত সোমবার ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও মানুষ এসেছিল। পয়লা বৈশাখ যত কাছে আসছে বিক্রি তত বাড়ছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।
তবে ক্রেতারা বলছেন, পাঞ্জাবি আর শাড়ির দাম একটু বেশিই মনে হচ্ছে। গত পয়লা বৈশাখে যে শাড়ি ৬০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন এবার তা এক হাজার টাকা হাকছেন বিক্রেতারা। সব জিনিসের দাম বেশি মনে হচ্ছে। তবে একটি উৎসবের দিন, কিনতেই হবে। ছেলে-মেয়ের আবদার রাখতে হয়, মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনতে হয়।
নিউমার্কেটে আসা অন্তত ২০ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এদের ভেতরে নাদিম বস্ত্র বিতানে গ্রামীণ চেকের বৈশাখী শাড়ি কিনতে আসেন নদী চৌধুরী নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, বৈশাখী শাড়ি কিনব। তবে গ্রামীণ চেকের লাল-সাদা শাড়ি। কিন্তু এখানে এসে মনে হলো গ্রামীণ চেক বাদে অন্য বৈশাখী শাড়িগুলোর দাম অনেক বেশি বলছেন দোকানদার।
বৈশাখী পাঞ্জাবি কিনতে এসেছিলেন আরমান রহমান ও তাঁর দুই ছেলে। একটি শাড়ি কিনেছেন স্ত্রীর জন্য। তিনটি পাঞ্জাবি কিনতে আসেন নিউমার্কেটের অন্যরকম পাঞ্জাবি বিতানে।
আরমান রহমান বলেন, পাঞ্জাবির দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবে নিজের জন্য না কিনলেও দুই ছেলের জন্য তো কিনতেই হয়। হয়তো আমিও একটি কিনব। বৈশাখ আমাদের উৎসব, বাঙালির উৎসব।
গাউছিয়া মার্কেটের সামনে থেকে চুড়ি কিনছিলেন খাদিজা খাতুন। তিনি বলেন, ‘লাল-সাদা রঙের চুড়ি কিনছি মেয়ের জন্য। মেয়ে ভেতরে তার ভাইয়ের সঙ্গে শাড়ি কিনতে গেছে। প্রচুর লোক, হাটাচলা করতে পারছি না। এক স্থানে দাঁড়িয়ে যে কিছু কিনব, ঠেলাঠেলির জন্য তাও পারছি না।
শিশু সাজিয়া নীলা এসেছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে। নীলা বলে, ‘আমি তিনটি জিনিস কিনব। একটি লাল শাড়ি, একটি হার আর চুড়ি। আমি, বাবা আর মা বৈশাখের দিন ঘুরব আর ঘুরব।’
অন্যরকম পাঞ্জাবি বিতানের আরাফাত রহমান বলেন, গত বছরের চেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে এবার। আমরা পাঞ্জাবি বানাই, সেই পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভালোই লাগছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নকশার ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবিও ভালো বিক্রি হচ্ছে। লাভ যা হচ্ছে খারাপ না। যত দিন যাচ্ছে, বিক্রি বাড়ছে।
ফুটপাতের চুড়ির দোকানি বিপ্লব হোসেন বলেন, প্রচুর চুড়ি বিক্রি হচ্ছে। লাল আর সাদা রঙের চুড়ি বেশি বেশি হচ্ছে। দুই ডজন চুড়ির দাম ১০০ টাকা। যে যেমন পোশাক কিনছে তার সঙ্গে মিলিয়ে কিনছে।
হকার্স মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, খুব একটা ভালো বিক্রি হচ্ছে না। গত দুদিন তো ঝড়-বৃষ্টির কারণে বেশি বেচতে পারিনি। আজ একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কেমন বিক্রি হয়।
বৈশাখ উপলক্ষে ফ্যাশন হাউসগুলো বেশি সংগ্রহে রেখেছে আরামদায়ক সুতি শাড়ি, সুতি থ্রিপিস ও বাহারি রঙের শাড়ি। বিপণিবিতানগুলোতে পাঞ্জাবি আছে হরেক রকমের, তবে লাল-সাদা রঙের বেশি। এ ছাড়া নানা ধরনের পোশাকে লাল-সাদার পাশাপাশি হলুদ, কমলা, মেরুন ও নীল রং বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। শাড়ি ও থ্রিপিসে অ্যাপ্লিকের কাজ রয়েছে। আঁচলে ঝুল ও বিভিন্ন আলপনা প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আছে জামদানি চেকের শাড়িও।
এ ছাড়া সুতির পাঞ্জাবিতে অ্যাপ্লিকের কাজ, অ্যামব্রয়ডারি, মাল্টিকালার প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। বৈশাখী সাজের শাড়ি ও কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে আনা হয়েছে ব্যাগ, গহনা ইত্যাদি। শাড়ি ও গহনার সঙ্গে মিলিয়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা রঙের কাঁচের চুড়ি।