নুসরাতের জানাজা পড়ালেন বাবা, অংশ নিলেন হাজারো মানুষ
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মরদেহ বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়ি সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরচান্দিয়ায় এসে পৌঁছায়। এ সময় এলাকার হাজার হাজার মানুষের আর্তনাদে আকাশ ভারি হয়ে ওঠে।
স্বজনসহ এলাকাবাসী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা এই বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নুসরাতের লাশ স্বজনদের দেখানো শেষে জনতার ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি নির্ধারিত জানাজার স্থান সোনাগাজীর মো. সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে প্রবেশ করে। জানাজায় ইমামতি করেন নুসরাতের বাবা মাওলানা এস এম মুসা। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম, ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রমুখ। জানাজা শেষে খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে নুসরাতকে দাফন করা হয়।
এদিকে নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় মামলাটি সোনাগাজী থানার কাছ থেকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোনাগাজী থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মামলার নথিটি বৃহস্পতিবার সকালে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
ফেনীর সোনাগাজীর মো. সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নুসরাত জাহানের জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ঢল। ছবি : স্টার মেইল
নুসরাতের মামলার আসামিদের আইন সহায়তা দেওয়ায় ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী বুলবুল সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জুবায়ের ও পপি রিমান্ডে
নুসরাত হত্যা মামলায় জুবায়ের ও পপিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আজ পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ নিয়ে এই মামলায় নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ফেনীতে শোক
নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় সোনাগাজীর সর্বস্তরের মানুষ কালোব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ কার্যদিবস সময় বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি কে এম এনামুল করিম এই তথ্য জানিয়েছেন।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নারী কেলেঙ্কারী, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অপকর্ম বছরের পর বছর চালিয়ে এলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সচেতন মহলসহ এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনীর সোনাগাজীর মো. সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নুসরাত জাহানের জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ঢল। ছবি : স্টার মেইল
এ ব্যাপারে মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি কে এম এনামুল করিম বলেন, ‘আমার আমলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে এডিএম আক্তারুন নেছা শিউলি মাদ্রাসাটির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একটি মেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহনির অভিযোগ দিয়েছিল। পরে মেয়েটির বাবাকে ডাকা হলে তারা ঘটনা অস্বীকার করেছেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এলে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।
নুসরাত এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এস এম মুসার মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নুসরাত তৃতীয়। গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাঁদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে।