সেন্টমার্টিনে বিজিবির বিওপির কাজ চলছে জোরেশোরে
দেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিরাপত্তার জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দ্রুতগতিতে এর নির্মাণকাজ চলছে।
সোমবার টেকনাফ বিজিবি-২-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরকার মোস্তাফিজুর রহমান ইউএনবিকে জানান, সেন্টমার্টিন দেশের সর্বদক্ষিণের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দ্বীপটির নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাদের ঠেকানোসহ সীমান্তে নানা অপরাধ দমনে সেন্টমার্টিন দ্বীপে একটি পরিপূর্ণ বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি সদস্যদের এই ক্যাম্পের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ভারী অস্ত্র।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরকার মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, গতকাল রোববার সকাল থেকে ভারী অস্ত্রসহ বিওপি ক্যাম্প স্থাপনের লক্ষ্যে দ্বীপটিতে নিয়মিত মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের পর ২২ বছর পর সেন্টমার্টিন দ্বীপ এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হলো।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মহসীন রেজা জানান, সেন্টমার্টিনের নিরাপত্তার জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তায় বিজিবির যতজন সদস্য দরকার, সেই কজন মোতায়েন থাকবে।
মুহাম্মদ মহসীন রেজা আরো বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা আটক করেছে কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। বিভিন্ন সময় ওই এলাকায় দস্যুর ঘটনাও ঘটেছে। টেকনাফ থানার একটি ফাঁড়ি রয়েছে সেন্টমার্টিনে। তবে বর্তমানে সরকার মনে করছে, সেন্টমার্টিনের নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েন দরকার। তাই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ নম্বর বিজিবির অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত) সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিজিবি ছিল। এর পর থেকে সেখানে বিজিবির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এত দিন ধরে কোস্টগার্ড সদস্যরা ওই সীমানা পাহারা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন সেন্টমার্টিনে বিজিবির একটি বিওপি স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। তাই সেখানে টহল দিচ্ছে বাহিনীটি। এটা নিয়মিত টহলের অংশ। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন বিজিবির সদস্যদের নিয়ে দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় মহড়া চলবে। স্বাভাবিকভাবেই টহল করছে বিজিবি।
সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, ‘গত ৩০ মার্চ থেকে দ্বীপটিতে ২০-৩০ জনের মতো বিজিবি সদস্য অবস্থান করছিলেন। কিন্তু রোববার হঠাৎ করে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ অধিক সংখ্যক বিজিবি সদস্যদের দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান বলেন, সীমান্ত সুরক্ষার জন্য কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বিজিবিও কাজ করবে। তাই বিজিবি সেন্টমার্টিনে টহল শুরু করেছে। বিওপি স্থাপনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এতে করে সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, সীমান্তের নানা অপরাধ দমনে অনেকটা সহায়ক হবে।
গত বছরের অক্টোবরে সেন্টমার্টিনকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছিল মিয়ানমার। দেশটির জনসংখ্যাবিষয়ক বিভাগের ওয়েবসাইট সম্প্রতি তাদের যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে সেন্টমার্টিনকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ দেখানো হয়। পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত উ লুইন ওকে তলব করে এর প্রতিবাদ জানায়। এরপর মিয়ানমার মানচিত্র থেকে সেটি পরিবর্তন করে।
কক্সবাজারসংলগ্ন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সৃষ্টি থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অন্তর্গত। ব্রিটিশ শাসনাধীন ১৯৩৭ সালে যখন বার্মা ও ভারত ভাগ হয়, তখন সেন্টমার্টিন ভারতে পড়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সেন্টমার্টিন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত। ১৯৭৪ সালে সেন্টমার্টিনকে বাংলাদেশের ধরে নিয়েই মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা সেন্টমার্টিনে মোতায়েন ছিল।
বিজিবি কর্মকর্তা সরকার মোস্তাফিজ বলেন, ‘পরে কোস্টগার্ড গঠিত হলে দ্বীপটিতে সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব সংস্থাটিকে দেওয়া হয়।’