একটা ইটে আঘাত করলে গোটা বিল্ডিং ভেঙে পড়তে পারে
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, রাতারাতি পুরান ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়। পুরান ঢাকার অবস্থা এতটাই নাজুক যে একটি বিল্ডিংয়ের একটা ইটে আঘাত করলে গোটা বিল্ডিং ভেঙে পড়তে পারে। সেখানে একটা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। আর গাড়ি যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করতে হলে অনেক বিল্ডিং ভাঙতে হবে।
পুরান ঢাকার চুরিহাট্টা ও বনানীর এফ আর টাওয়ার আগুনের ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘ইমারত নির্মাণে সরকারের দায়িত্ব ও নাগরিকের করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি রাজধানীর প্রতিটি ভবনে ইমারজেন্সি এক্সিট রুট বা দুর্ঘটনার শিকার হলে জরুরি ভিত্তিতে ভবন থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় ভবনকে নিরাপদ ও মানুষের জীবন রক্ষার্থে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মন্ত্রী।
শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, কিছু ভবন আছে, যেগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তাদের আমরা একটি নির্ধারিত সময় বেধে দিয়ে বলব, এ সময়ের ভেতরে বিল্ডিং কোডে যে ব্যবস্থা অনুমোদন করা হয়েছে, সে জাতীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সম্পৃক্ত করতে হবে। করার পর আমরা আবার পরিদর্শনে লোক পাঠাব। তারা দেখে সনদ দেওয়ার পরে আমরা সেই বিল্ডিংকে ব্যবহার উপযোগী ঘোষণা করব।
যে ভবনে গ্যারেজের জায়গা দখল করে অথবা সিঁড়ির প্রশস্ত জায়গা দখল করে বা কমন স্পেস দখল করে আলাদা স্থাপনা করা হয়েছে, তাদের নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সময় দেওয়া হবে। সে সব স্থাপনা সড়িয়ে নিয়ে বিল্ডিং কোডের আওতায় সেসব স্থাপনা করতে হবে, যোগ করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী।
পরিদর্শন ও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি অভিযোগটা সত্য। এবার আমরা ইনকুয়ারি ও পরিদর্শনের প্রতিবেদন, কার কার ইমারতে কী কী সমস্যা আছে, সেটা আমরা জাতীয় দৈনিকে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করব। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করব। কারণ এসব মানুষের স্বরূপ সবার জানা উচিত। অনেকে আছেন রাজনৈতিক নেতা, অনেকে বিশাল সামাজিক নেতা, কেউ আছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কেউ আইনজীবী, কেউ চিকিৎসক। এ রকম নানা ব্যক্তি শ্রেণির মানুষেরা আছেন। তারা সমাজে দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু তারা যে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকির কাজগুলো করে নিজের অর্থ লিপ্সাটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তাদের স্বরূপ আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই।
ভবনগুলো পরিদর্শন করতে এরই মধ্যে ২৪টি পরিদর্শন দল গঠন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তারা প্রথমপর্যায়ে শুধু বহুতল ভবনকে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। যেখানে সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি রয়েছে। রাজউক থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে তদন্তের। আমরা সব প্রতিবেদনগুলো নিয়ে একত্রে বসব। বসে এ জাতীয় বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ, অর্থাৎ নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, আইনজীবী, সিটি করপোরেশন, রাজউকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসব। এগুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান সরকারের এ মন্ত্রী। তবে কোনোভাবেই এ বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখা হবে না বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, রাজউকসহ আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো অনিয়ম বা কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে ন্যূনতম কোনো অনুকম্পা পাবে না। আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে বলছি, অতীত আমি জানি না। ইনশা আল্লাহ আমার আমলে কেউ পার পাবে না।