‘থাপ্পড় খাওয়া’ প্রকৌশলীর অপসারণ দাবিতে তিনদিনের আল্টিমেটাম
চট্টগ্রামে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ‘থাপ্পড় খাওয়া’ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশকে অপসারণের দাবিতে তিনদিনের আল্টিমেটাম কর্মসূচি দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা।
সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করতে গত সোমবার তাঁর কার্যালয়ে গেলে মেয়র ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়েরের হাতে লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ করেন প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান। এ ঘটনার বিচার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি।
অন্যদিকে প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান সোমবার সিটি মেয়রের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন অভিযোগ করে তাঁর অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ইয়াং ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরাম। আশরাফুজ্জামান বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহসভাপতি।
একই অভিযোগে আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। তাঁরা তিনদিনের মধ্যে প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানকে সরিয়ে নেওয়া না হলে আগামী রোববার থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে যাবেন বলে জানান প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহামুদ হাসনী। এ ছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ওয়ার্ড কার্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ সময় সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মেয়রের এপিএস ইউসুফ রায়হান কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়ের, শৈবাল দাস সুমন, মো. আবদুল কাদের, আবিদা আজাদ ও জেসমিনা খানম, শ্রমিক লীগ নেতা সফর আলী বক্তব্য দেন। প্রতিবাদ সমাবেশে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছাড়াও করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানকে থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সার্কেলের আওতাধীন কার্যালয়গুলোতে একযোগে কর্মবিরতি চলছে। নগরীর জিইসি মোড়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয় বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গত সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তা আন্দরকিল্লায় সিটি মেয়রের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে আগ্রাবাদ হালিশহর এক্সেস রোড সম্প্রসারণকাজে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সরকারি জমি নিয়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
তবে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন থাপ্পড় মারার কথা অস্বীকার করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গত সোমবার তিনি রোজা রেখেছিলেন। সন্ধ্যায় ইফতারের পরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শামসুল আলমের নেতৃত্বে ছয়জন প্রকৌশলী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সিটি করপোরেশনের কনফারেন্স রুমে আসেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কয়েকজন প্রকৌশলী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র বলেন, আমি হালিশহর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে এক্সেস রোডের নির্মাণাধীন ড্রেনটি সোজা করলে কী সমস্যা জানতে চাই। এ বিষয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বা নির্বাহী প্রকৌশলীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান গৃহায়ণের ৫০ ফুট জমি রাস্তায় চলে যাবে বলে অভিযোগ করেন। আমি, বললাম, গৃহায়ণের অনেক জমি তো বেদখল হয়ে গেছে। জনস্বার্থে এ সামান্য জমি রাস্তায় গেলে অসুবিধা কী? ওই সময় আশরাফুজ্জামান উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকেন, ‘সিটি করপোরেশনের তো অনেক জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে।’ আমি আমাদের কোন জায়গা অবৈধ দখলে আছে জানতে চাইলে তিনি শহরের ফুটপাথে কেন হকার বসে তার কৈফিয়ত চান। তাঁর হাবভাবই ছিল উদ্ধত। তাঁর আচরণ ছিল খুবই দুঃখজনক। আমি তাঁকে ধমক দিয়েছি। একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় তা তিনি জানেন কিনা জানতে চেয়েছি। তাঁকে আমি রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেছি। কিন্তু তিনি রুম থেকে বের না হয়ে বলতে থাকেন, ১০ ফুটের বেশি জায়গা কোনোমতে দেওয়া সম্ভব হবে না। এ সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মো. জুবায়ের তাঁকে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বাইরে নিয়ে চলে যান। প্রকৃতপক্ষে সেখানে থাপ্পড় দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটে নাই।