বিএনপি ব্যর্থ হলে এত কথা বলছেন কেন?
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আমরা এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। সরকার চেষ্টা করছে আমাদের এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ভাঙতে। সরকারের বিএনপিকে নিয়ে এত চিন্তা, তারা সব সময় শুধু বিএনপিকে নিয়েই কথা বলছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে তাহলে বিএনপিকে নিয়ে আপনারা এত কথা বলছেন কেন? বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় বোকা বানানো যাবে না। এদেশের মানুষ সব সময় লড়াই করে এসেছে, তারা তাদের অধিকার আদায় করতে জানে।
রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন। ত্যাগ স্বীকার করে আজ তিনি কারাগারে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে সে বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা দরকার। খালেদা জিয়ার চিকিৎসাটা অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে তিনি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ। তাঁর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে দেয় না, তাঁর প্রাপ্য আইনগতভাবে যে জামিন, সে জামিন না দিয়ে ধীরে ধীরে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, আজ যারা বাকশাল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে, প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার সব আয়োজন করেছে, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। ভয় পায় এই কারণে যে, তিনি বের হয়ে এলে এই জনগণকে আটকে রাখতে পারবে না, প্রতিরোধ করে রাখতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, যাদের অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের সবাইকে মুক্ত করা হোক। এ ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের ঐক্যকে আরো সুসংহত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ড. কামাল বলেন, আমাদের দেশের যে ঐতিহ্য একাত্তরের আগে থেকে, সব অসম্ভবকে আমরা সম্ভব করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। তারপর ২০০৮-এ যে ভাবে আমরা অগ্রসর হয়েছিলাম, এগুলো সব ঐক্যের ফসল।
আলোচনা সভায় অন্যান্য বক্তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে তাঁর মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলেন।
বক্তাদের এ সব বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রবীণ এই রাজনীতিক ও সংবিধান প্রণেতা বলেন, আজকেও আপনাদের মধ্যে যে দাবিগুলো (আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি) এসেছে, সে দাবিগুলোকে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করি। এবং মনে করি সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে এটাকে আমরা সবাই অর্জন করতে পারব। দেশে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব। যেটা হলে জনগণ ক্ষমতার মালিক হিসেবে যে ভূমিকা রাখার কথা তা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্ববায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনারা বক্তৃতা করেন আমরা সমুদ্র জয় করেছি, নীল অর্থনীতি চালু করেছি, আমরা আকাশ জয় করেছি, আমাদের স্যাটেলাইট সারা দুনিয়ায় খবরদারি করছে আর আমরা এফ আর টাওয়ারের ১০ তলায় উঠতে পারি না। সারা দেশে আগুন লেগে লেগে মানুষ মারা যাচ্ছে। আর উনি বেগম জিয়াকে, বিরোধী দলকে বলেন, আগুন সন্ত্রাস। লজ্জাও করে না। আপনারা আমলে, আপনার কারণে, আপনার কর্মফলে মানুষ আগুনে পুড়ে পুড়ে মারা যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রত্যেকটা মানুষেরই কিছু না কিছু ভুল থাকে। কারণ মানুষ ফেরেশতা না। তেমনি বঙ্গবন্ধুরও একটি ভুল ছিল, বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। অনুগ্রহ করে আপনি সেই পথে অগ্রসর হবেন না।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রাজনীতিবিদরা রাজনীতিতে নেই। সেই কারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পথ হারিয়ে ফেলেছেন। এত উন্নতি এত আলোর মধ্যেও ওনার যেন দৃষ্টি হারিয়ে গেছে। উনার দৃষ্টি হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে বাকশাল সেই পদ আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিল্লিতে বাঁধা আছে মন্তব্য করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সামাজিক বৈষম্য নিরসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ দিল্লির দরবারে বাঁধা আছে। দিল্লির সাউথ ব্লকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁধা আছে। তার পাহারাদার ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী, ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী, তার পেছনে আছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনী।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যেভাবেই হোক ভোট লুণ্ঠন করে, অন্যায়ভাবে আপনি ক্ষমতায় এসেছেন। এখন দেশে শান্তির প্রয়োজন। আর এই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। এবং সব রাজনীতিবিদের গায়েবি, আজগুবি মামলা থেকে মুক্তি দিয়ে দেন। সবাইকে মুক্তি দিয়ে রাজপথে স্বাধীনভাবে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার দেন। এবং নতুন করে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, দেশে আবার নতুন করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। আগুন জ্বলছে, জ্বলবে। ধর-পাকড়াও করে দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। দয়া করে আপনি রাজনীতিবিদদের নিয়ে দেশ পরিচালনা করেন। গুপ্ত বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনীদের নিয়ে দেশে কখনো মঙ্গল বয়ে আনা যায় না।
অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি শুধু আমার না, ঐক্যফ্রন্টের না, বিএনপির না, সারা বাংলাদেশের মানুষ এখন তাঁর মুক্তি চায়। আপনারা মুক্তি চান? তাহলে মাঠে যেতে হবে।
আবদুর রব বলেন, আপনারা গণতন্ত্রের, বাক-স্বাধীনতার, ভোটের অধিকার চান? এসব খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির সাথে একাত্ম হয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির মাধ্যমে সব দাবি আদায় হবে। এজন্য শুধু প্রেসক্লাবে স্লোগান দিলে চলবে না। আন্দোলন গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, মহানগরীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।
সরকারের উদ্দেশে আ স ম আবদুর রব বলেন, যদি পুনর্নির্বাচন না দেন আন্দোলনের মাধ্যমে যদি আপনাদের বিদায় নিতে হয় তাহলে এই দেশে আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না, চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এ দেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।
রাষ্ট্র নাই, রাষ্ট্র শেষ হয়ে গেছে মন্তব্য করে আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশে কোনো অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, বাকস্বাধীনতা নাই, রাষ্ট্র শেষ হয়ে গেছে, রাষ্ট্র আর নাই।
জেএসডির সভাপতি বলেন, বনানীতে-গুলশানে আগুন নিভবে না। ২২তলা ভবন করার অনুমতি দিয়েছেন, আগুন নিভানোর সরঞ্জাম রাখেন নাই। আগুন নিভবে কেমনে? রাস্তায় লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। আসলে এ দেশে জীবনের নিরাপত্তা নাই। সবচেয়ে সস্তা দাম হলো এ দেশের মানুষের জীবন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।