ঝড়-বজ্রপাতে ঢাকাসহ ৫ জেলায় সাতজন নিহত
ঝড়-বজ্রপাতে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় সাতজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় ঝড়ের সময় রাজধানীতে মাথার ওপর ইট ও গাছ পড়ে দুজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া চার জেলায় বজ্রপাতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ঢাকায় ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। বেশ কয়েকটি সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা।
ঝড়ের সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনে একটি বহুতল ভবন থেকে ইট পড়ে মো. হানিফ (৪৫) নামের এক চায়ের দোকানির মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর পর পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুজন তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের সময় মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এসআই সুজন বলেন, পল্টন মোড়ে চায়ের দোকানদারি করতেন হানিফ। সেখানে পাশের একটি বহুতল ভবনের (মল্লিক কমপ্লেক্স) ওপর থেকে বেশ কয়েকটি ইট তাঁর ওপর পড়ে। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। পাশে বেশ কয়েকটি ইট পড়ে থাকতে দেখে গেছে। পরে আমরা তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি।
নিহত হানিফ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলাদিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে। তিনি রাজধানীর মুগদাপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জান-ই-আলম মুন্সি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লেক রোডে একটি গাছ মনিপুরিপাড়ার বাসিন্দা মিলি ডি কস্টার (৬২) ওপর ভেঙে পড়লে তিনি নিহত হন।
এর আগে রোববার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, আজ দুপুর ৩টা থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
ভজন দাস, নেত্রকোনা : নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে আসর আলী (৬৯) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল জানান, বাহাদুরপুর গ্রামের আসর আলী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে বাড়ির উঠানে গৃহস্থালীর কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাতে নিহত হন।
এস এম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার উত্তর পতনউষার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো গ্রামের দিনমজুর জুনেদ মিয়ার ছয় বছরের শিশুকন্যা সাদিয়া আক্তার ও চার বছরের মুন্নী আক্তার। তারা পতনঊষার মহিলা মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত দুই শিশুর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
গ্রামবাসী জানায়, সকালে সাদিয়া, মুন্নীসহ তিন শিশু বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে দুই শিশু গুরুতর আহত হয়। তাদের দ্রুত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মারুফ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা সদরে বজ্রপাতে রাব্বি মিয়া (১৮) নামের একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে রোকন মিয়া (২১) নামের একজন। নিহত রাব্বি মিয়া ইটনা সদরের নয়ানন্দী হাটি গ্রামের কাদির মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, রোববার ধনু নদীর বলদা ঘাটে স্টিল বডি নৌকা থেকে তীরে পাথর নামানোর কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। দুপুর ১২টার দিকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। শ্রমিকরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ির দিকে রওনা হন। দাসপাড়া গ্রামের সামনের রাস্তায় পৌঁছলে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে রাব্বি মিয়া ও একই গ্রামের রোকন মিয়া আহত হন। এলাকাবাসী তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডা. নাদিরুল আলম রাব্বিকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহত রোকন মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা। তাঁর বাবার নাম শুক্কুর আলী। ইটনা থানার ওসি মুর্শেদ জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় রোববার দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতে দেলোয়ার হোসেন (১৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দেলোয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের জুহুর মিয়ার ছেলে।
জামালগঞ্জ থানার ওসি আবুল হাসেম জানান, দেলোয়ার হোসেন বাড়ির পাশের হাওরে ঘাস কাটতে গিয়েছিল। দুপুর ১টার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। দেলোয়ারের হোসেনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে দুপুরের পর থেকে জেলার বিভিন্ন হাওরে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ট্রলার ডুবে পুলিশ ও আনসার সদস্য নিখোঁজ
নাফিজ আশরাফ, নারায়ণগঞ্জ : নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফেরার পথে মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে একটি ট্রলার ডুবে এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। আহত অবস্থায় ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ জানান, মেঘনার দক্ষিণ তীরে মুন্সীগঞ্জ লাগোয়া সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ এলাকা। উপজেলার ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১৬ জন ট্রলারে করে সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। মেঘনা নদীর মাঝ পথে ট্রলারটি কালবৈশাখীর কবলে পড়ে ডুবে যায়। এরপর সাঁতরে ১৪ জন তীরে উঠতে পারলেও এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
এক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ
আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ : বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঝড়ো বাতাস কমে গেলে এই নৌপথের সব ফেরি পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। এরপর থেকে উভয়পাড়ের ঘাট এলাকায় আটকে পড়া বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঝড়ো বাতাসের কারণে এ নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধ করা হলে যাত্রীসহ যানবাহন শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েন।
তখন বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক ফরিদুল ইসলাম জানান, বিকেলে ঝড়ো হাওয়ায় পদ্মা-যমুনায় প্রবল ঢেউ আর স্রোতের কারণে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। লঞ্চগুলো অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছিল। সাড়ে ৫টার দিকে প্রবল বাতাসে ঢেউয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঝড়ো বাতাস কমে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলী, কুষ্টিয়া : বৈশাখ মাস আসতে না আসতেই আজ বিকেল পৌনে ৫টায় জেলায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে চলে প্রকৃতির তাণ্ডব। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে উঠতি ফসলসহ গাছপালা ও কাঁচাপাকা ঘড়বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।