বাঘাইছড়ির ব্রাশফায়ার নির্বাচনী সংহিসতা নয় : ইসি সচিব
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হওয়ার কারণে উপজেলা নির্বাচনের চার ধাপে একটি লোকও নিহত হয় নাই। হয়তো কিছু আহত হয়েছে।’
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে ইসি সচিব এই মন্তব্য করেন।
কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ব্রাশফায়ারে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যে সাতজন নিহত হয়েছে এটাকে আপনি কি বলবেন-এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এটা তো নির্বাচনকালীন সহিংসতা নয়। আপনারা কি এটাকে তাই বলবেন? আপনারা জানেন, সেখানে পাহাড়িদের বিভিন্ন গ্রুপ কাজ করে। সেখানে ভোটকেন্দ্র দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আঞ্চলিক দলের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য এমন হতে পারে। এটাকে আমরা নির্বাচনী সহিংসতা বলতে নারাজ।’
কিন্তু ওই ঘটনা তো ভোট গণনার পরপরই ঘটেছে। তখনো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া সরকারিভাবে অথবা গেজেট প্রকাশ করার সময় পর্যন্ত নির্বাচনের সময়-এ কথার জবাবে ইসি সচিব আবারও বলেন, ‘এটা পাহাড়িদের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের ফল। এটাকে নির্বাচনী সহিংসতা বলা যাবে না।’
সচিব বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা অনেক উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এমন কি আমরা পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করেছি। কয়েকজনকে আমরা সাময়িক বরখাস্তও করেছি।’
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ সব ধাপের নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ধাপ থেকে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন নিয়ে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে। একই সাথে ভোটার কম হলেও নির্বাচন কিন্তু সুষ্ঠু হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া কয়েক ধাপের ভোট নিয়ে মাননীয় কমিশনাররা সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মত দিয়েছেন।’
ইসি সচিব বলেন, ‘চতুর্থ ধাপের ভোটে অনিয়মের কারণে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে ১২টি কেন্দ্রর ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত কেন্দ্রগুলো হলো মুন্সীগঞ্জের তিনটি, ঢাকার ধামরাইয়ের একটি, কুমিল্লার চান্দিনায় চারটি, কুমিল্লার মেঘনায় দুটি ও কুমিল্লার হোমনার দুটি কেন্দ্র। বাকি কেন্দ্রগুলোয় মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় সাতজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় সাজা দেওয়া হবে।’
হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, এই নির্বাচনে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৪৯টি উপজেলাতে প্রায় ১২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছিলাম। ঢাকা ও স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে তিন শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আমরা নিয়োগ করেছিলাম। তার পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, এমন কি গ্রাম পুলিশও আমরা নিয়োগ করেছিলাম। এর মধ্যে আমাদের যেসব কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, সেসব কেন্দ্র তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবে। আর যেসব উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে, সেসব উপজেলা নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে এর তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ১৮ জুন ৩০ থেকে ৪০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে।
চার ধাপের ভোটগ্রহণে ভোটের হার নিয়ে নির্বাচন কমিশন কতখানি সন্তুষ্ট-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আহত, নিহত যাতে না হয়, সেটার ওপরে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। আপনারা আমাদের শতকরা হারের কথা বলেছেন, শতকরা হার বাড়াতে গেলে অনিয়মের মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। এ জন্য আমরা ভোটাররা যে পরিমাণ আসুন না কেন, আমরা ওটার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা যদি ভোটার হার বাড়াতে চাই, তাহলে আবার সেই স্থানীয় প্রশাসন বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অনিয়মের দিকে ঝুঁকে পড়বে। অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মানুষের যাতে প্রাণহানি না হয়, আহত না হয়, সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রকৃত কত লোক ভোটকেন্দ্রে আসে, সেটাই চেয়েছি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাহলে ৮০ শতাংশ ভোট কীভাবে পড়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের তুলনা করলে চলবে না। জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু উপজেলায় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি। আমরা চেয়েছি যে যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা অংশগ্রহণ করে।’
সচিব বলেন, ‘কড়াকড়ি সব সময় ছিল। সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে। তখন সেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এখনো তাই নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমর্থকরা কিন্তু আসেনি। আমাদের অনুমান ৪০-৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে, তা একটা দল যে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরই।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) দেরিতে ফলাফল পাওয়ার বিষয়ে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসতে দেরি হয়। তৃতীয় ধাপে ইভিএমের ফলাফল রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (আরএমএস) আনতে চেয়েছিলাম। ইন্টারনেট ডাউন থাকার কারণে আমরা পারিনি। চতুর্থ ধাপে আমরা সেটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। ম্যানুয়্যালিই ফলাফল আনা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়েছিল।’
ইসি সচিব আরো বলেন, প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ৪৬৫টি উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ৪০টির মতো উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। যেসব উপজেলার ভোট আদালত ও ইসি নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোতে তদন্ত সাপেক্ষে ভোটের দিন ঠিক করা হবে।