সাতক্ষীরায় ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান। ছবি : এনটিভি

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান অভিযোগ করে বলেছেন, ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট ডাকাতি করেছেন। আগেই বেশ কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভুয়া কর্মকর্তাদের ভোট গ্রহণের কাজে নিয়োগ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিজয়ী প্রার্থী সাঈদ মেহেদির সঙ্গে যোগসাজশ করে এই অনিয়ম করা হয়েছে।’

তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখানকার তিন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে কম ৯ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে জামানত হারান চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান।

অভিযোগ তুলে ধরতে আজ শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শেখ আতাউর রহমান। তবে তিনি পুনর্নির্বাচন দাবি করেননি। এসব বিষয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রয়োজনে মামলাও করবেন।

তবে এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘শেখ আতাউর রহমানের কোনো অভিযোগ লিখিতভাবে পাওয়া যায়নি। বিধিবহির্ভূত কোনো নির্বাচন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ থেকে থাকলে তা তিনি নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি নির্বাচনে কোনো অবৈধ সুযোগ সুবিধা না পেয়ে এ ধরণের কথাবার্তা বলছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে শেখ আতাউর রহমান তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র থেকে নৌকার এজেন্টদের মারপিট করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ৭৮টি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সাঈদ মেহেদি জুলুম করে ভোট ডাকাতি করেছেন।’

২৫টি মাদ্রাসার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠান নাম সর্বস্ব, ঠিকানাবিহীন ও অস্তিত্বহীন। এর ভুয়া শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট চুরি করে ঘোড়ার প্রার্থীকে জয়ী করা হয়েছে। এছাড়া ব্লক সুপারভাইসর, ল্যাব সহকারী ও পোস্টম্যানদেরও ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের একই কেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে তিনি সাঈদ মেহেদির বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ তুলে ধরেন। সাঈদ মেহেদির কারণে এখন কালিগঞ্জে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দেওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মারধর করতে শুরু করেছেন বিজয়ী প্রার্থী ও তাঁর লোকজন।’

জানতে চাইলে বিজয়ী প্রার্থী সাঈদ মেহেদি বলেন, ‘২৪ মার্চের নির্বাচনে জামানত হারিয়ে শেখ আতাউর রহমান এখন ভুল বকছেন। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োগ প্রদান প্রশাসনিক বিষয়। এ ব্যাপারে আমার হাত থাকার কথা সত্য নয়। ভোটের পরে আমার কোনো নেতাকর্মী কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়ায়নি।’

কালিগঞ্জে পুনরায় ভোট চান কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে প্রার্থীর পক্ষে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাহার হোসেন কান্টু। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’ তবে শেখ আতাউর রহমান বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশ সরকার, সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করতে চাই। একইসঙ্গে সচেতন দেশবাসীকে অবহিত করে উপযুক্ত প্রতিকার চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা হলেন, তারালি ইউনিয়ন পরিষদের এনামুল হোসেন ছোট, মথুরেশপুরের মিজানুর রহমান গাইন, ধলবাড়িয়ার গাজী শওকত হোসেন, চাম্পাফুলের মোজাম্মেল হক, রতনপুরের আশরাফুল ইসলাম খোকন, নলতার আজিজুর রহমান।

নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ২ লাখ ১৭ হাজার ৭০৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৩০টি। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী শেখ আতাউর পেয়েছেন ৯ হাজার ৪৯৬ ভোট। দ্বিতীয় হয়েছেন তাঁর ভাতিজা মেহেদি হাসান সুমন ৩৪ হাজার ৭৬৬ ভোট। বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী সাঈদ মেহেদি পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৮৩৮ ভোট।