‘আপা, বিপদে আছি, বেঁচে থাকলে দেখা হবে’
‘আগুন লাগার পর ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় দুপুর দেড়টায়। ভাই ফোন দিয়ে বলে, আপা, দোয়া কইরো। খুব বিপদে আছি। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।’ সেই ভাইয়ের সঙ্গে আর দেখা হয়নি তারিকুর নাহার গিনির। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন গিনির ভাই আনজির সিদ্দিকী আবির। তিনি ওই ভবনের ১৪ তলায় চাকরি করতেন।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আনজির সিদ্দিকী আবিরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই লাশ গ্রহণ করেছেন বোন তারিকুর নাহার গিনি ও ভাই তানজির। এ সময় পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তারিকুর নাহার গিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে দুপুর দেড়টায়। সে বলল, খুব বিপদে আছি। এর পরে ফোন ধরছে না। অনেকবার মোবাইলে ফোন দিয়েছি। ভাইসহ কল্যাণপুরে থাকি। ভাইয়ের খোঁজে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে আসছি। এখন শুনি, ভাই নেই। সে আগুনের কারণে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পারায় মারা গেছেন।’ এই বলেই অনবরত কান্না করতে থাকেন তিনি।
বনানী এফ আর টাওয়ারে নিহত আনজির সিদ্দিকী আবিরের বোন তারিকুর নাহার গিনি। ছবি : এনটিভি
হাসপাতালে আসা আনজির সিদ্দিকী আবিরের ভাই তানজির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভাইকে এ বছরের ডিসেম্বরে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু এত অল্প বয়সে ভাইয়ের মৃত্যু হবে, তা কল্পনা করিনি। ভাইয়ের মৃতদেহ আমরা লালমনিরহাটের পাটগ্রামে নিয়ে যাচ্ছি।’
তানজির বলেন, তাঁর ভাই ওই ভবনের ১৫ তলায় মাইকা সিকিউরিটিজ হাউসে কাজ করতেন। রাতে আনজিরের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলে তাঁকে শনাক্ত করেন। পরে রাতেই তাঁদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
গতকাল দুপুরে বনানীর ২২ তলা ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুনের ঘটনায় আটকা পড়েন অনেকে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও আটকেপড়াদের উদ্ধারে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনের আট ও নয়তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। এর পরই একের পর লাশ বের করে আনা হয়। আজ সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে লাশের সংখ্যা ২৫ বলে জানানো হলো। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে, তা এখনো জানা যায়নি। আজ সকাল থেকেই ভবনটি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।