ভৈরবে মাটিতে বসে চলছে কোমলমতিদের পাঠদান
প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নেই। নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ। তাই মাটিতে চাটাই পেতে গাদাগাদি করে পাঠদান গ্রহণ করতে হচ্ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মুক্তিযোদ্ধা ফয়সুল আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীকে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। এর জন্য প্রয়োজন ছয়টি শ্রেণিকক্ষ। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে আছে চারটি । আর সেগুলোও আয়তনে খুবই ছোট। তাই শিক্ষার্থীদের রুমের বাইরে খোলা একটি ছাপরা ঘরে মাটিতে চাটাই পেতে পাঠদানে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।
শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার রেলওয়ের ভূমিতে বসবাসরত হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তানদের শিক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ। তখন বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় স্থানীয় প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ফয়সুল আলমের নামে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৌর কর্তৃপক্ষের আর্থিক অনুদানে বিদ্যলয়টি পরিচালিত হয় প্রায় ১১ বছর।
পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের সুপারিশে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়। বিদ্যালয়টির পড়াশোনার মান ভালো হওয়ায় পরে ধীরে ধীরে এখানে স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে থাকে। ফলে বেড়ে যায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫৪ জন হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তান পড়াশোনা করছে। বাকিরা স্থানীয় লোকজনের সন্তান।
প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চের অভাব ছাড়াও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের রাস্তাটি করুণ দশায় রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য নেই টিউবওয়েল। খেলার জন্যও নেই কোনো মাঠ। তিনি এসব সমস্যার সমাধানে শিক্ষা বিভাগের দ্রুত সহায়তা কামনা করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পৌর কাউন্সিলর মো. দ্বীন ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের ভূমিটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। তাই সরকারিভাবে ভবন নির্মাণসহ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক মাস আগে কাঁচাঘরটি ঝড়ে পড়ে গেলে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে পুনঃনির্মাণ করেছি। আমার নিজ টাকায় কয়েকটি ইলেকট্রিক পাখার সংযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হলো রেলওয়ে ভূমির ওপর নির্মিত এটি। তাই বিদ্যালয়টির জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এটিকে সরকারি করা হয়েছে। সরকারি বিধিমালায় বিধিনিষেধ থাকায় অনেক কিছুই আমরা করতে পারছি না। তারপরও আমরা যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করে যাচ্ছি।