নদীর মাটি ইটভাটায় বিক্রি, দেখার কেউ নেই!
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বড়াল ও গুমানি নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে ড্রেজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে অবাধেই চলছে মাটি কাটা। উত্তোলিত মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়।
অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে এলাকার যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কতিপয় নেতা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। দিনের পর দিন এভাবে মাটি উত্তোলনের মহড়া চললেও শুরু থেকেই নীরব উপজেলা প্রশাসন। বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার শাহানগর এলাকার বড়াল নদীতে মাটি কাটার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অষ্টমণীষা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজির উদ্দিন ও সহসভাপতি আলাউদ্দীন আহমেদ। সেনগ্রাম এলাকার বড়াল-গুমানী-করতোয়া নদীর মাটি কাটা চলছে অষ্টমণীষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ ও সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া জাকির মেম্বরের তত্ত্বাবধানে। আবার ঝবঝবিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী সাইদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম ও সাজু আহমেদসহ ১০/১২ জনের একটি চক্র গুমাণী নদীর মাটি কাটছে।
নুর ইসলামসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, বাইরে থেকে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোক এসে দেখে চলে যায়। তাতেও বন্ধ হয় না এইসব নদী থেকে অবাধে মাটি উত্তোলন ও বিক্রির কাজ।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় থেকে অবাধে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বড়াল ও গুমাণী নদী থেকে মাটি উত্তোলন করে ছোট-বড় ট্রাক বোঝাই করে ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত, বছরের শুষ্ক মৌসুমে যখন নদীবক্ষের অনেকাংশে পলি জমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে ঠিক তখনই বাড়ে এসব মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, কিছু দুর্বৃত্ত নদীর সৌন্দর্য ও গতিপ্রবাহ বিনষ্ট করছে। নদীচরের ফসলি জমিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিকভাবে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে এসব নদী থেকে মাটি কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর পার্শ্ববর্তী সড়ক, বসতভিটা ও জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়ার আশংকা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল হক বলেন, ‘নদী দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের, আমাদের নয়।‘
এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমণীষা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজির উদ্দিন মাটি কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নদীর মাটি কেটে সরকারের উপকারই করা হচ্ছে। কারণ নদী ড্রেজিং করতে সরকারের অনেক টাকা খরচ হয়। বিনা পয়সায় তারা সরকার উপকার করছে। নদীর মাটি বিক্রির মধ্য দিয়ে অনেক গরিব মানুষও উপকৃত হচ্ছে।
অষ্টমণীষা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, নদী থেকে মাটি কাটা ঠিক না এ বিষয়ে তাদের জানা ছিল না।
অষ্টমণীষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, নদীতে চর পড়ায় তারা মাটি কেটে নাব্যতা রক্ষার পক্ষে। তাই মাটি কাটায় সহযোগিতা করছেন।
তবে মাটি কাটার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিএনপিনেতা জাকির মেম্বর। তিনি বলেন, এই মাটির কাটা ও বিক্রির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এলাকাবাসী মাটি উত্তোলন করে নদীর নাব্যতা রক্ষা করতে চায়। তাই মেম্বর হিসেবে আমি তাদের সহায়তা করছি।
অন্যদিকে ইউনিয়নের একাধিক স্থানে এস্কেভেটার দিয়ে অবাধে নদীতীরের মাটি কাটা ও বিক্রি হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন অষ্টমণীষা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ আয়নুল হক।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাছুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানামাত্রই ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখানে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ বা প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেলে সবাই পালিয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।