গ্যাসের দাম বাড়ালে জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। দেশে এক দলীয় শাসন চলছে। এখানে মানুষের নিরাপত্তা নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি ঠিক করতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং জনগণের দাবি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে বিএনপি। এজন্য ২৫ মার্চ থেকে সাতদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেবে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। আমরা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কখনো মেনে নেব না। দাম বাড়ানো হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সাধ্যমতো প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন একটি বিবৃতিতে দিয়েছে। সেটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশ্বের সব মিডিয়া ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও বলেছে এ দেশে ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। এ দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি সেটা দেশের জনগণ জানে। এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠতে পারে না। শুধু মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা নয় শুধু, সব আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলেছে নির্বাচনে মানুষের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আমরা এমন সময় স্বাধীনতা দিবস পালন করতে যাচ্ছি যখন হাজার হাজার নিরপরাধ গণতন্ত্রকামী মানুষকে কারগারে আটকে রাখা হয়েছে। আজ দেশে একদলীয় শাসন কায়েম রয়েছে। সে জন্য এখন দেশে কেউ আর বিচার পায় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা রাজনৈতিক সচেতন তারা এ সরকারের কাছে অপছন্দের। তাদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম-খুন করা হচ্ছে। আমরা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, হীরুর কথা স্মরণ করতে পারি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আজ স্বাধীনতা দিবসে আবার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই দেশের মানুষকে, গণতন্ত্রকে খালোদা জিয়াকে মুক্ত করার সংগ্রাম করছি। ২৬ মার্চ এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাধীনতা যুদ্ধ কেন? আমরা কেন পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল গণতন্ত্র। লক্ষ্যই ছিল গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আজকে প্রায় এক লাখ মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে, যারা প্রতিদিন নির্যাতিত হচ্ছে। আজকে দেশে একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আজকে মানুষ বিচার পায় না। নিরাপত্তা নেই মানুষের।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি :
১. ২৬ মার্চ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সব ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
২. দলের জাতীয় নেতারা এবং সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ২৬ মার্চ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে যাত্রা এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।
৩. একইদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ঢাকায় ফিরে এসে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধিতে দলের জাতীয় নেতারা এবং সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবে। মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
৪. ২৭ মার্চ বিকেল ৩ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
৫. স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৫ মার্চ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
৬. ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা শেষে সেদিন সন্ধ্যায় জাসাসের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৭. কেন্দ্রীয় বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলো মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ করবে।
৮. বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখায় স্থানীয় সুবিধানুযায়ী মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র্যালির আয়োজন করবে।
৯. মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সব দলীয় কার্যালয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ছবিসহ আলোকসজ্জা।
১০. মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
১১. মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা।