নিউজিল্যান্ডে হামলাস্থলে পুলিশ না যাওয়ায় তদন্তের দাবি তথ্যমন্ত্রীর
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি ব্রেন্টন ট্যারান্টের হামলাস্থলে দেশটির পুলিশ সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এজন্য তিনি দ্রুত ও পূর্ণ তদন্ত করতে নিউজিল্যান্ড সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চ হলে ঢাকা মানবাধিকার কনভেনশন ২০১৯-এ যোগদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই দাবি জানান ড. হাছান মাহমুদ।
ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলায় তিন বাংলাদেশিসহ নিহতদের জন্য গভীর শোক, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের প্রাণ রক্ষায় সৃষ্টিকর্তার কাছে পরম কৃতজ্ঞতা জানান তথ্যমন্ত্রী। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এই নৃশংস হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমরা নিউজিল্যান্ডকে শান্তির দেশ হিসেবে জানতাম। সেখানে মসজিদের মধ্যে প্রার্থনারত নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও নিন্দনীয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যে, হামলাকারী আগে থেকেই হামলার পরিকল্পনা ও তার ঘৃণা-বিদ্বেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিল। এমনকি হামলার শুরু থেকে হামলা পরিচালনার ঘটনাও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ দিয়েছিল। ১৮ মিনিট ধরে পাখি শিকারের মতো মানুষ হত্যার লাইভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া হলো। একটি মসজিদের পর আরেকটি মসজিদে হামলা হলো, কিন্তু পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে পারল না, এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক। আমাদের দেশেও এমন উপর্যুপরি হামলা করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যানজটের ঢাকা শহরেও কোথাও আগুন লাগলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছে যায়, আর যানজটহীন নিউজিল্যান্ডে হামলাস্থলে পুলিশ পৌঁছাতে পারল না, এটি দ্রুত ও পূর্ণ তদন্তের বিষয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদমনে ইতিমধ্যে যথেষ্ট দক্ষতার প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আজ জঙ্গি দমনে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের অভিজ্ঞতা অন্যদের কাজে লাগতে পারে।’
তথ্যমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট দলের সদস্যদের প্রাণ রক্ষায় সৃষ্টিকর্তার কাছে পরম কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু এটি অত্যন্ত চিন্তার বিষয় যে, তারা পাঁচ মিনিট আগে সেখানে পৌঁছালে কী ঘটনা ঘটতো! যেখানে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দল তাদের জাতীয় দলের সাথে খেলতে গেছে, সেখানে তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।’
মানবিক মূল্যবোধে পশ্চিমাদের চেয়ে আমরা এগিয়ে
মহানগর নাট্যমঞ্চ হলে ঢাকা মানবাধিকার কনভেনশন ২০১৯-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মানবিক মূল্যবোধে অনেক পশ্চিমা দেশ থেকে আমরা এগিয়ে আছি, তাই পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণ নয়। তারা ভৌত ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে উন্নততর হলেও, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে আমরা তাদের থেকে উন্নত ও বেশি ধনী।’
ন্যায়ভিত্তিক সুষম সমাজ, উন্নত রাষ্ট্রের পাশাপাশি উন্নত জাতি গঠনে মানবিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে তথ্যমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার আসন্ন জন্মদিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার রক্ষায় প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন গড়ে তোলেন, পরে সে আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ দেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার কারণে তাঁর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারেনি, যা পূর্ণ করার কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
মানবাধিকার রক্ষায় আয়োজক সংস্থার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সব মানবাধিকার সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। মানবাধিকার নিয়ে প্রশংসনীয় কাজের জন্য সংস্থার নির্বাচিত কর্মীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী কাজী রেজাউল মোস্তফার সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি এবং কনভেনশন উদ্বোধক হিসেবে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাইফুল ইসলাম দিলদার বক্তব্য দেন।