মেয়র নির্বাচনে কোথাও তিন ভোট, কোথাও পাঁচ ভোট
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। মিরপুরের মনিপুরপাড়ার একটি কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তিন ভোট, অর্থাৎ শতকরা ০.১২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এক শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে ১০টি কেন্দ্রে। এ ছাড়া আটটি কেন্দ্রে পড়েছে দুই শতাংশেরও কম ভোট।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যে ফল কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের কাছে এসেছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে মিরপুরের মনিপুরপাড়ায় অবস্থিত ই-আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের দুই হাজার ৫০৪টি ভোটের মধ্যে মাত্র তিনটি ভোট পড়েছে ব্যালট বাক্সে। এ তিনটি ভোটই পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
মিরপুরের মনিপুর এলাকার গ্রিন ভিউ হাইস্কুলের মহিলা কেন্দ্রের মোট ভোট দুই হাজার ৪৭১। তবে ভোট পড়েছে মোটে পাঁচটি। এই পাঁচ ভোটও পেয়েছেন আতিকুল ইসলাম। এই কেন্দ্রে শতকরা ভোট পড়েছে ০.২০ শতাংশ। এ ছাড়া মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুল কেন্দ্রে দুই হাজার ২২০টি ভোটের মধ্যে পড়েছে সাতটি, অর্থাৎ ০.৩২ শতাংশ ভোট।
এই তিনটি কেন্দ্রসহ মোট ১০টি কেন্দ্রে এক শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো বাড্ডার কুড়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় (০.৩৩ শতাংশ), মিরপুরের পাইকপাড়ার বশির উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (০.৩৬ শতাংশ), গ্রিন ভিউ হাইস্কুল (মহিলা-২) (০.৩৬ শতাংশ), কাফরুলের শহীদ পুলিশ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (০.৬৩ শতাংশ), মাদার কেয়ার প্রি. স্কুল (০.৭৪ শতাংশ), একই এলাকার ঢাকা আহছানিয়া মিশন মহিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (০.৭৭ শতাংশ) এবং জোয়ার সাহারা এলাকার নিউ লাইফ প্রি-ক্যাডেট স্কুল (দ্বিতীয় তলা) (০.৮৫ শতাংশ)।
ভোটের ফল পর্যালোচনায় আরো দেখা যায়, আটটি কেন্দ্রে এক থেকে দুই শতাংশ ভোট পড়েছে। এগুলো হলো জোয়ার সাহারার গুলশান কলেজ, (নিচতলা, মহিলা কেন্দ্র-১) (১.৩২ শতাংশ), বাড্ডার কুড়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় (দ্বিতীয় তলা-উত্তর পাশে) (১.৩২ শতাংশ), মিরপুরের ঢাকা আহছানিয়া মিশন মহিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মহিলা-১ কেন্দ্র (১.৩৮ শতাংশ), কাফরুলের শহীদ পুলিশ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নিচতলা কেন্দ্র (১.৪৫ শতাংশ), মিরপুরের আলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা কেন্দ্র (১.৫৫ শতাংশ), একই এলাকার রোটারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১.৬৪ শতাংশ), কসমিক কিন্ডারগার্টেন মহিলা-১ কেন্দ্র (১.৮০ শতাংশ) এবং জোয়ার সাহারার নিউ লাইফ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের নিচতলা পুরুষ কেন্দ্র (১.৮৩ শতাংশ)।
এ ছাড়া নয়টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে দুই থেকে তিন শতাংশ। কেন্দ্রগুলো হলো আদাবরের চিলড্রেন একাডেমি (২.০৪ শতাংশ), মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ব্রাঞ্চ-৩ (২.১১ শতাংশ), কালশী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণের তিনতলা ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা (২.১১ শতাংশ), শহীদ পুলিশ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নিচতলায় পুরুষ কেন্দ্র (২.১৪ শতাংশ), পীরেরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ তলায় পুরুষ কেন্দ্র (২.৫৬ শতাংশ), উত্তরা হাইস্কুল ও কলেজের নিচতলা মহিলা কেন্দ্র (২.৬৫ শতাংশ), পাইকপাড়া স্টাফ কোয়ার্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের ভবন কেন্দ্র (২.৬৯ শতাংশ), আলীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্র (২.৭৩ শতাংশ) ও ফুলকি নার্সারি স্কুলের পুরুষ কেন্দ্র (২.৮৫ শতাংশ)।
সাতটি কেন্দ্রে পড়েছে তিন থেকে চার শতাংশ ভোট। এগুলো হলো মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখার দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশে পুরুষ কেন্দ্র (৩.১০ শতাংশ), পাইকপাড়া স্টাফ কোয়ার্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে ভবনের দুটি কক্ষ কেন্দ্র (৩.২৬ শতাংশ), পীরেরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় পুরুষ কেন্দ্র (৩.৩৫ শতাংশ), মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ব্রাঞ্চ-৩-এর পুরুষ কেন্দ্র (৩.৩৯ শতাংশ), কম্বাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশে মহিলা কেন্দ্র (৩.৪১ শতাংশ), কুড়িল কুড়াতলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুরুষ কেন্দ্র (৩.৫৮ শতাংশ) ও গুলশান কলেজের দ্বিতীয় তলায় মহিলা কেন্দ্র (৩.৬৭ শতাংশ)।
এসব ফলাফলের কথা স্বীকার করে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ২০০২ সালের ঢাকা সিটির ভোটও কিন্তু শতকরা ৩২ ভাগ পড়েছিল। তার মানে, ওই সময়ও ভোট নিয়েও কি মানুষের খুব আগ্রহ ছিল? তা ছাড়া এই মেয়র নির্বাচন হচ্ছে মাত্র এক বছরের একটু বেশি সময়ের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই এই ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। এ ছাড়া ভোটের দিনের সকালে বৃষ্টি হওয়া ও আবহাওয়া সারা দিন খারাপ থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে এই কম ফলাফলই কিন্তু প্রমাণ করে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটার সংখ্যা কম হলে ইসির কিছু করার নেই। কেন্দ্রে ভোটার আসবে কি আসবে না, সেটা ভোটারের সিদ্ধান্ত।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে এই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের ভেতরেই খুব একটা আগ্রহ ছিল না। কারণ এটা ছিল উপনির্বাচন। একই দিনে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটির কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভেতরে কিন্তু মেয়র পদের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হয়েছে।