দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শপথ, আইন কী বলে?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত আটজনই শপথ নেবেন না বলে জানানো হয় জোট থেকে। কিন্তু হঠাৎ করে সুর বদলে ফেলেন গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও মো. মোকাব্বির খান। তাঁরা শপথ নেওয়ার ঘোষণা দেন।
দলীয় নির্দেশ না মেনে শপথ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় আলোচনা হচ্ছে যে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিলে অথবা তাদেরকে যদি দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাহলে তাঁদের সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে কি না অথবা ওই আসন শূন্য ঘোষণা করবে কিনা নির্বাচন কমিশন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় স্পিকারের কাছে শপথ নেওয়ার কথা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের। মোকাব্বির খানেরও আজ শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও নিচ্ছেন না। তবে তিনি পরে শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
মোকাব্বির খান বলেন, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁর শপথ অনুষ্ঠান কয়েক দিনের জন্য পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে নতুন সময়সূচি জানানো হবে।
মোকাব্বির খান দাবি করেন, ড. কামাল হোসেনসহ বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তাঁর শপথ নেওয়ার পক্ষে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতারা বিষয়টি নিয়ে এখন বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য পার্টনারদের সাথে আলোচনা করবেন এবং পরবর্তীতে শপথ অনুষ্ঠানের নতুন সূচি ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-
(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা
(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,
তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।
এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের কথা হয় নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার কমিটির সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কবিতা খানমের সঙ্গে। তিনি বলেন, যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে তাঁর আসনটি শূন্য হবে। এর বাইরে আর সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু বলার নেই।
কবিতা খানম বলেন, পদত্যাগ না করে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথ গ্রহণ করেন। সেজন্য যদি দল তাঁকে বহিষ্কার করেন, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে এখানে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।
নির্বাচন কমিশনার আরো জানান, সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ না করলে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তবে স্পিকার চাইলে যুক্তিসঙ্গত কারণে সময় বাড়াতে পারেন। আর না বাড়ালে শূন্য ঘোষণা হওয়ার পর পুনরায় আবার সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচিত সদস্যরা শপথ না নিলে ইসির কিছুই করার নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো সংসদ সদস্য শপথ নিলে কী হবে না হবে তা ঠিক করবে সংসদ সচিবালয়।
ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেবেন বলে শুনেছি। যদি তাঁরা দলীয় আইন ভঙ্গ করে শপথ নেন তবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন স্পিকারকে চিঠি দিতে পারেন আইন অনুযায়ী। দল যদি আইন ভঙ্গের অভিযোগে চিঠি দেন তখন স্পিকার নির্বাচন কমিশনে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিঠি দেবেন এবং আমাদের মতামত চাইবেন। তখন ইসি সংসদ সচিবালয়কে মতামত দেবেন আইন অনুযায়ী।