শুধু ত্বকী নয়, অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ওসমান পরিবার : রফিউর রাব্বি
নারায়ণগঞ্জের হত্যার শিকার মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেছেন, ওসমান পরিবার শুধু ত্বকীকে হত্যা করেছে তা নয়, স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা। একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। সরকার ওসমান পরিবারের পেছনে থাকায় ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না।
ত্বকী হত্যার ছয় বছর উপলক্ষে আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ নগরীর দেওভোগ শেখ রাসেল পার্কে আয়োজিত আলোচনা সভায় ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী একথা বলেন।
সন্ত্রাস দমন ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল হক কাজলসহ অন্যরা। বক্তারা ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করেন।
বুধবার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ছয় বছর উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ছবি : এনটিভি
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছি ছয় বছর হয়ে গেল। জানি না আমাদের আর কতদিন এভাবে বিচার চাইতে হবে। বিশেষ একটি পরিবার দ্বারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেই এর বিচার হচ্ছে না। বাংলাদেশে তো অনেক হত্যার বিচার হচ্ছে, কয়েকটি ছাড়া। সাগর-রুনির বিচার হচ্ছে না আপনারা জানেন এর সঙ্গে কী জড়িত, তনু হত্যার বিচার হচ্ছে না, সেখানেও কারা জড়িত, সেজন্য হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু ত্বকীর সঙ্গে কী জড়িত? আমার মনে হয় ওই পরিবার জড়িত বলেই বিচার হচ্ছে না। বাংলাদেশের কেউ তাদেরকে ছুঁতে পারবে না। নারায়ণগঞ্জকে বাংলাদেশের বাইরের একটা ভূখণ্ড মনে হয়, এখানে নির্বিচারে হত্যা করা হবে কিন্তু বলার কেউ নাই।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র বলেন, আাশিক হত্যার বিচার হলে চঞ্চল হত্যা হয়তো হতো না। চঞ্চল হত্যার বিচার হলে মিজু হত্যা হয়তো হতো না। মিজু হত্যার বিচার হলে ব্যবসায়ী বুলু হয়তো হত্যাকাণ্ডের শিকার হতো না। শেষ পর্যন্ত আমাদের ছোট্ট সন্তানকে হত্যা করা হলো নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্তব্ধ করার জন্য, ভয় দেখানোর জন্য।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। বিলম্বিত বিচার আসলে বিচার নয়। আপনি তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারেননি, সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে পারেননি। এগুলো করতে না পারলে আপনার গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে। গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে আইনের শাসন।
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ছয় বছর আগে এই সময়টাতেই ত্বকীকে অপহরণ করা হয়েছিল। তাকে অপহরণ করে সায়ান প্লাজায় এক অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাত সাড়ে ৯টায় আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘাতকের জবানবন্দি অনুযায়ী। র্যাবের অভিযোগপত্রেও উল্লেখ করা হয়েছে, আজমেরী ওসমানের উপস্থিতিতে তাঁর লোকজন মিলে এই এই ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হচ্ছে শামীম ওসমান। এর সঙ্গে তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান জড়িত। তারা সম্মিলিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এই পরিবারটি নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে। ১৯৭৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিএস রোকনকে এই পরিবার হত্যা করেছে, ১৯৮৮ সালে কালাম-কামাল জোড়া খুন এই পরিবার সংগঠিত করেছে। পরবর্তীতেও বহু হত্যাকাণ্ড এই পরিবার ঘটিয়েছে।
তারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটায় মানুষ যাতে ভয় পায় এবং ভয়ে তারা যা বলে তাই যেন মানুষ করে। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য বছরের পর বছর তারা এই হত্যাকাণ্ডগুলো করে যাচ্ছে। এটি যে একটি খুনি পরিবার তা স্পষ্ট হয়েছে ত্বকী হত্যার পর। এর আগে দেশের মানুষের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না। ছাত্রলীগের মিঠুকে যখন এই জামতলায় দুপুর ২টার সময় আজমেরী ওসমান উপস্থিত থেকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই ফতুল্লা থানায় মামলা দিতে গেলে আজমেরী ওসমানের নাম থাকায় মামলা নেয় নাই পুলিশ। আজমেরী ওসমানের নাম বাদ দিয়েছে তারপরে মামলা নিয়েছে।’ বলছিলেন ত্বকীর বাবা।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘বারেবারে রাষ্ট্র, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন এই পরিবারের পেছনে থাকাতে তারা বেপরোয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে লাশের পর লাশ ফেলেছে এই পরিবার। যারা মাদকের ব্যবসা করে, চাঁদাবাজি করে, তারা সবাই এই পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় করে। তারপরেও তারা সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করে। তারা মনে করে নারায়ণগঞ্জের মানুষ শিশু, দুধ খায়।’
ত্বকীর বাবা বলেন, গত বছর ১৬ জানুয়ারিতে যেই নিয়াজুল অস্ত্রসহ মানুষের হাতে পিটুনি খেয়েছে। আমাদের মেয়র নাজেহাল হয়েছে। সেই নিয়াজুল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে। চাঁদাবাজরা চাঁদার বিরুদ্ধে সমাবেশ করে। খুনিরা খুনের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে। এই হচ্ছে ওসমান পরিবার।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ অপহরণের পর ত্বকীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যার দুইদিন পর শীতলক্ষ্যার শাখা কুমুদিনী খাল থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ত্বকী হত্যার ছয় বছর উপলক্ষে সন্ত্রাস দমন ত্বকী মঞ্চ তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে।