জনপ্রিয়তার জন্য এমন কিছু করবেন না, যা কপিরাইট সমস্যা তৈরি করে
‘কপিরাইট আইনের সাথে আমরা এখনো ততটা পরিচিত নই। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের সবারই পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। নতুন শিল্পীদের উদ্দেশে বলতে চাই, জনপ্রিয়তা লাভের জন্য আপনারা এমন কিছু করবেন না, যা পরবর্তী সময়ে আইনি জটিলতা তৈরি করে। কপিরাইট নিয়ে শিল্পীদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির যেন মিল হয়, সেজন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।’
সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী কে এম খালিদ ‘সংগীতের স্বত্ব সুরক্ষায় কপিরাইট আইনের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন। কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার ভবন মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইট জাফর রাজা চৌধুরী।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা মালিক, আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দিলীপ কুমার সাহা, কবি নূরুল হুদা, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন ও দিলরুবা খান, বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাকসুদ আহমেদ, শিল্পী মানাম আহমেদ, ফুয়াদ নাসের বাবুসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আরো বলেন, কপিরাইট আইনের সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ১৯৭২ সালে। ধীরে ধীরে সেটা পরিবর্তিত হয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে। তিনি বলেন, শিল্পীদের কল্যাণের জন্য আমরা ১৩তলা একটি কমপ্লেক্স করছি। আগামী ৫০ বছর পরের কথা চিন্তা করেই আমাদের এ উদ্যোগ। সেখানে আপনাদের সবাইকে পাশে চাই। কারণ, গান আছে না, ‘চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে…’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রোকসানা মালিক বলেন, কপিরাইট অত্যন্ত জটিল একটি ব্যাপার। কিন্তু বিষয়টি সহজ করা দরকার। শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার সংগীত, আপনার মেধা এটি আপনার অধিকার। এর সুরক্ষা হওয়া প্রয়োজন। শিল্পীরাও চান সবাই তাদের গানের চর্চা করুক।
দিলীপ কুমার সাহা বলেন, কপিরাইটের আওতা অনেক বড়, সংগীত এটির একটি অঙ্গ। কপিরাইট আইনে এর সুরক্ষা দেওয়ার যে পদ্ধতি আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ব্যাপারে আরো আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
সেমিনারের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শিল্পী মাকসুদ আহমেদ। তিনি বলেন, কপিরাইট অত্যন্ত জটিল আইনি একটি বিষয়। কিন্তু আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাস্বত্ব আইন নিয়ে সেভাবে পড়ানো বা চর্চা করা হয় না। কপিরাইন নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা হলে আমাদের বিচারকরা তা শুনতে বিব্রতবোধ করেন। এ নিয়ে অনেক মামলা হয়েছে, কিছু মামলায় রায় হয়েছে, অনেকগুলোর এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা আসলে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সেভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি না। তবে এ ক্ষেত্রে শিল্পীদেরও কিছু ব্যর্থতা রয়েছে।
রাষ্ট্র ব্যান্ড বা রক সংগীতকে এখনো স্বীকৃতি দেয় কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে মাকসুদ আহমেদ বলেন, একুশে পদকে নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পপসম্রাট আজম খানকে যখন একুশে পদক দেওয়া হলো, সেখানে শুধু সংগীত বলা হলো। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও রক সংগীতকে কোনো বিশেষ ঘরানার সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
সেমিনারে শিল্পী কাজী কৃষ্ণকলি প্রশ্ন করেন, যারা বামবার সদস্য, তাদের স্বার্থ রক্ষা করে বামবা। কিন্তু আমরা যারা একক (সলো) সংগীতশিল্পী আছি, তারা কপিরাইট নিয়ে কিছু ঝামেলা মোকাবিলা করি। কপিরাইট আইনটিও আমাদের কাছে ধোঁয়শা মনে হয়। বিভিন্ন কোম্পানি যখন আমাদের সাথে চুক্তি করে, তখন তারা জটিল সব ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে, যেটা আমাদের পক্ষে বোঝা কষ্টকর। অনেক সময় সেখানে মালিকানার কথাও উল্লেখ থাকে। আমার প্রশ্ন হলো, এই মালিকানা কি আজীবনের জন্য, নাকি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য?
এ প্রসঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইমাজিন রেডিও অ্যাপের সিইও শাহরিয়ার শহীদ বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দুটি দিক- একটি আইনগত, আরেকটি প্রযুক্তিগত। কোনো শিল্পী যখন কারো সঙ্গে চুক্তি করেন, তখন আইনগত বিষয়টি তাকেই পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে হবে।
এ সময় কপিরাইট অফিসের আইনি সহায়ক ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন শিল্পীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সুনির্দিষ্টভাবে কখনোই অভিযোগ করেন না। আপনারা অভিযোগ করে দেখেন। আমরা যদি সমাধান না করি, তখন আপনারা এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলুন।
কবি নূরুল হুদা বলেন, কেউ আপনাদের কাছ থেকে আজীবনের জন্য স্বত্ব কিনে নিতে পারবে না। চুক্তিতে উল্লেখ না থাকলে সেটা পাঁচ বছরের জন্য বলবৎ থাকবে, আজীবন নয়।
এ প্রসঙ্গে জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, সংগীতের জন্য আইএসআরসি কোড রয়েছে, সেটা নিয়ে আমাদের দেশের শিল্পীরা খুব একটা সচেতন নন। অনেক সময় আমরা গান তৈরি করে কপিরাইট অফিসে নিবন্ধন করি না। আর কোনো গান নিবন্ধন করা না হলে, আপনি কীভাবে পরে সেটার মালিকানা দাবি করবেন?