খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে : বিএনপি
‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৮ নভেম্বর যেসব অসুখ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেগুলো এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথা ও হাতের কাঁপুনির কারণে কোনো কিছু ধরতে পারছেন না। এই বয়সে এ রোগগুলোর নিয়মিত চিকিৎসা করা না হলে জীবননাশের প্রচণ্ড ঝুঁকি থাকে।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এসব তথ্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিন মাস আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত সরকারি মেডিকেল বোর্ড গতকাল প্রথমবারের মতো তাঁকে দেখতে যায়। চিকিৎসা না দিয়ে সরকার ধীরে ধীরে তাঁকে (খালেদা জিয়াকে) মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কালবিলম্ব করার কারণে যদি কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়, তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আর দেরি না করে খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি আরো বলেন, এ জন্য দল খরচ বহন করতেও প্রস্তুত।
গত সাড়ে তিন মাসে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, এর পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র আছে। মূলত তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে অকালে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সাফ জানিয়ে দিতে চাই, দেশনেত্রীর যদি কোনো প্রকার শারীরিক ক্ষতি হয়, এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’
‘আদালতের নির্দেশে করা মেডিকেল বোর্ড সাড়ে তিন মাস পর গত পরশু আদালতের নির্দেশে তাঁকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। তাঁরা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন, গত সাড়ে তিন মাসে তাঁর কোনোরকম ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়নি। এক্স-রে করা হয়নি। ব্লাডপ্রেশার মাপা হয়নি। অর্থাৎ কোনো চিকিৎসা করা হয়নি,’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
পরিবার-দল আইনজীবীর সাক্ষাতে অসহযোগিতার অভিযোগ
বিএনপির পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ‘আগে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে পারতেন। এখন ১৫ দিনের আগে কোনোমতে দেখা করতে দেওয়া হয় না। দলের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে এর আগে কয়েকবার দেখা করেছি। চার মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর আইনজীবীরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটার কোনো ভিত্তি নেই। এরই মধ্যে যে তিনি জামিন পেয়েছিলেন, তারও কোনো সুবিধা তাঁকে গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। আপনারা জানেন, প্রায় ৩০টি সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে একটার পর একটা নিয়ে আসা হয় আর নিম্ন আদালতে গেলে অনেক দিন পরে আবার তারিখ দেওয়া হয়।’
খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুবারের বিরোধীদলীয় নেতা। এখনো তিনি এই দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ন্যায়বিচার তাঁর প্রাপ্য।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।