চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না : হাইকোর্ট
রাজধানীর চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না। এটার দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি আরেকজনের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটা ঠিক না।’
সেই সঙ্গে আদালতের মন্তব্য, নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে চকবাজারের এ ঘটনা ঘটত না। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য দিয়েছে।
চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম অপসারণসহ কয়েকদফা নির্দেশনা চেয়ে করা পৃথক তিনটি রিট শুনানির জন্য উত্থাপন করা হলে আজ সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালত রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটগুলোর ওপর মঙ্গলবার দুপুর ২টায় শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে গতকাল রোববার পৃথক চারটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ, আইনজীবী নূর মুহাম্মদ আজমী, খন্দকার কাওসার ও আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ মিয়া। এসব রিটের মধ্যে তিনটি আবেদন শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়।
এদিকে সোমবার রিট উত্থাপনকালে হাইকোর্ট বলেন, ‘নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন নিহতের ঘটনার পর আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী দুটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। কিন্তু আন্তরিক হলেই কী লাভ হবে? আবারও অনেক মানুষের জীবন তো চলে গেছে। কাউকে না কাউকে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তো একা সব করতে পারবেন না। পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি প্রধানমন্ত্রী চকবাজারের ঘটনা নিজেই তদারকি করছেন। তিনি একা দেশ চালাতে পারবেন না। এসব কাজে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন করা।’
আদালত আরো বলেন, ‘মালিকরা দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়ায় বাড়ি গুদাম হিসেবে ভাড়া দেন। অথচ নিজেরা থাকেন গুলশান-বনানীতে। কী করে সিটি করপোরেশন? দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। রাস্তায় মারা যায় সাধারণ মানুষ। তাদের কী দোষ? ‘পত্রিকায় দেখেছি, নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা জানি না তারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না। পদক্ষেপ না নিলে ধরে নিতে হবে তাদের অবহেলা ছিল।’
আদালত বলেন, ‘পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারে না। ৫-৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে হয়তো ভবনগুলোর কিছু হবে না, কিন্তু ৭-৮ মাত্রার হলে একটা ভবনও থাকবে না। তখন কাউকে উদ্ধার করারও কেউ থাকবে না। পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে।’
চকবাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘আমাদের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।’
নিমতলীর তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে আদালত বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে দায় সবার। নিমতলীর ঘটনায় যারা রিট আবেদন করেছিলেন তাদের উচিত ছিল সরকারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না হলে তা আদালতের নজরে আনা। কিন্তু তারা তা করেনি। আদালতের আদেশ প্রয়োগ হলো কি হলো না তা আর তারা দেখেনি।’
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ৬৭ জন। আহত হয় আরো অনেক। নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে আগুনের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে রাসায়নিকের গুদাম থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।