বিমান ছিনতাই-চেষ্টার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই-চেষ্টার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকারকে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ফ্লাইট বিজি-১৪৭ ময়ূরপঙ্খী বিমানটি গতকাল ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেল সাড়ে ৫টার পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এটি চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানে এক অস্ত্রধারী থাকায় ঘটনার পর বিমানবন্দরে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানের ক্রুরা কৌশলে ১৪২ যাত্রীকে বিমান থেকে নিরাপদে বের করে দেন। তবে ছিনতাইকারী বিমানের একজন ক্রুকে জিম্মি করতে সক্ষম হয়। রানওয়েতে বিমানটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডাকা হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থাকে।
অপারেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেজর জেনারেল মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে বিমানবাহিনী জানতে পারে যে এটা হাইজ্যাক হয়েছে। বিমানটি ৫টা ৪১ মিনিটে অবতরণ করে।’তিনি জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে অভিযান শুরু করে কমান্ডো দল।
মেজর জেনারেল মতিউর রহমান জানান, ছিনতাইকারীর বয়স ২৫-২৬। ব্যক্তিটি বাংলাদেশি। নিজের নাম মাহাদি বলে জানায়। ওই ব্যক্তির কাছে একটি পিস্তল ছিল।
মতিউর রহমান বলেন, ‘নিবৃত্ত করার জন্য কমান্ডো বাহিনী প্রথমে তাকে (ছিনতাইকারী) গ্রেপ্তার হওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর স্বাভাবিক অ্যাকশন যেটা, সেটা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ছিনতাইকারী গোলাগুলিতে প্রথমে আহত ও পরে আমরা জেনেছি সে এরই মধ্যে মারা গেছে। এ ঘটনায় কোনো যাত্রী হতাহত হয়নি। বিমানে ১৩৪ যাত্রী, ১৪ ক্রুসহ মোট ১৪৮ জন ছিলেন। তাঁদের সবাই অক্ষত অবস্থায় বিমান থেকে বের হয়ে এসেছেন। বিমানের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিমান তল্লাশি করে বিমানটিকে চলাচল বা ওড়ার জন্য নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান বলেন, ‘এ অল্প সময়ের মধ্যে যতটুকু কথা হয়, সে শুধু একটা দাবি উপস্থাপন করে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চায়।’
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল মতিউর রহমান বলেন, ‘তার (ছিনতাইকারীর) অনেক ডিটেইল পাওয়া যাবে। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বের করা হবে। আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সে কীভাবে প্রবেশ করেছে, তা বের করা হবে।’
অস্ত্রধারী ব্যক্তি প্রসঙ্গে মতিউর রহমান বলেন, ‘বিমানের মধ্যে আহত হয়েছে। পরে মারা গেছে।’
বিমানবন্দরের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মতিউর রহমান বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুক্ষণের মধ্যে তা স্বাভাবিক হবে।’
এদিকে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-১৪৭ একজন যাত্রী কর্তৃক ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা করা হলে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমানের ক্রুরা কৌশলে ১৪২ যাত্রীকে বিমান থেকে নিরাপদে বের করে দেন। তবে ছিনতাইকারী বিমানের একজন ক্রুকে জিম্মি করতে সক্ষম হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট সহায়তা চাওয়া হলে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স (কিউআরএফ) প্লাটুন অতিদ্রুত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছায়। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর একটি কমান্ডো দল কুতুবদিয়ায় চলমান যৌথ অনুশীলনের জন্য চট্টগ্রামের নৌবাহিনী ঘাঁটি ইশা খায় ওই সময় অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় সেনাপ্রধানের নির্দেশক্রমে ও জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল, অধিনায়ক-১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে ছিনতাইকারীকে আটক করার জন্য আনুমানিক ৭টা ২০ মিনিটে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় ছিনতাইকারীকে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান করা হলেও ছিনতাইকারী আত্মসমর্পণ না করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিনতাইকারীকে বিমানের বাইরে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
সেনা কমান্ডোদের ত্বরিত এবং সফল অভিযানের কারণে এই উদ্ভূত পরিস্থিতি মাত্র আট মিনিটেই নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ছিনতাই নাটকের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়।