‘আমি কই পামু, অগো দেহি না ক্যা?’
দুই ভাই ও শিশু ভাতিজাকে হারিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে বসে পাগলপ্রায় বোন জরিনা বেগম। কারো সান্ত্বনার বাণীই তাঁকে শান্ত করতে পারছে না।
জরিনার দুই ভাই মোহাম্মদ আলী ও অপু। তিন বছরের ছেলে আরাফাতকে চিকিৎসক দেখিয়ে চকবাজার এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আলী। সঙ্গে ছিলেন ভাই অপু। গতকাল বুধবার রাতে আগুন লাগার পর কেমিক্যালের গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে মারা যান এ তিনজন। তিনজনের লাশই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রয়েছে।
মোহাম্মদ আলীর বয়স ৩২ বছর। ছোট ভাই অপুর বয়স ৩০। তাদের শরীরে পোড়া বা অন্য কোনো ক্ষতের চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন বোন জরিনা বেগম। মোহাম্মদ আলী চকবাজার এলাকায় কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন।
জরিনা আজ আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আরাফাত, আমার কলিজার টুকরা, আমার কলিজার টুকরা মোহাম্মদ আলী, ওই কই গেলো, কই গেলো? ‘আমি কই পামু, ওই আরাফাত। এত মানুষ দেহি, অগো দেহি না ক্যা? অগো দেহি না ক্যা? মোহাম্মদ আলী কই গেল?’
চকবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭৮ জন। এদের অধিকাংশের লাশই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আনা হয়েছে। সকাল থেকেই মর্গের সামনে আত্মীয়স্বজনদের ভিড় জমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়তে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছে। তারা বলে, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালন করা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু এখানে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আছে, এগুলো খুবই বিস্ফোরণ ঘটছে। এগুলোর টেম্পার অনেক বেশি। এগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে আমাদের ফায়ার ফাইটিং করতে হচ্ছে। রেসিডেনশিয়াল এরিয়াতে কোনো কেমিক্যালের গোডাউন থাকার কথা না।
চকবাজার এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন করে আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।