মর্গে পড়ে আছে সারি সারি লাশ
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মরদেহ পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। বেশির ভাগ মরদেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। চেহারা বোঝা মুশকিল। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের লাশ বহনকারী ব্যাগে সার বেঁধে রাখা হয়েছে উদ্ধার করা মৃতদেহগুলো। সেসব লাশ ঘিরে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য হলো উদ্ধার হওয়া লাশের বেশিরভাগই স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কাউকে দেখে শনাক্ত করা কঠিন। তবু এরই মাঝে লাশের ভেতর নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। যদি কাউকে কোনোভাবে শনাক্ত করা যায়।
মর্গে মা খুঁজছেন সন্তানের লাশ। ভাইয়ের খোঁজে ছুটে এসেছেন ভাই। স্ত্রী খুঁজছেন স্বামীকে, সন্তান বাবাকে। স্বজনের লাশ শনাক্ত করে কেউ চিৎকারে ফেটে পড়ছেন। কেউ হয়ে যাচ্ছেন শোকে পাথর। কেউ আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছেন দুই হাত তুলে। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন এই শোক সামলাতে না পেরে। সব মিলিয়ে সমস্ত এলাকায় চলছে এক শোকের মাতম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে এক স্বজনের আহাজারি। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
লাশ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ও হস্তান্তরের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উদ্ধার করা লাশগুলোর ব্যাগে নম্বর দেওয়া আছে। কেউ স্বজনের লাশ শনাক্ত করলে, ব্যাগের নম্বর জানিয়ে পুলিশের কাছে নাম ঠিকানা লিখিয়ে যেতে হবে। মেডিকেলের প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুরান ঢাকায় নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় গতকাল বুধবার রাতে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছে। তারা বলে, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।