‘আমার পুলা আইবো, ওর কিছু হয় নাই’
‘বন্ধুরা মিলে বেড়াতে গেছে আমার পুলা। আমার পুলা আইবো। ওর কিছু হয় নাই।‘ এই কথা বলে অনবরত কাঁদছিলেন মোরি বেগম।
মোরি বেগমের ছেলে তানজিল হাসান রুহান গতকাল বুধবার রাত থেকে নিখোঁজ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিনি ও তাঁর স্বামী হাসান খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে বসে ছেলের খোঁজ করছেন। আর তাঁকে ঘিরে মানুষের সান্ত্বনা। স্বজনদের আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের পরিবেশ ভারি হয়ে গেছে।
চকবাজারের পাশে উর্দু রোডের বাসিন্দা হাসান খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার বাবার (ছেলে) ওখানে যাওনের কথা না। তারে আজরাইলে নিয়া গেছে। বন্ধুসহ বিকালে ঘুরতে যাইয়া আর আয়ে না। আমার পোলার কিছু হয় নাই।’
এরপর এক স্বজন মোবাইলে ছেলের ছবি দেখালে মোরি বেগম মোবাইলে চুমু দিতে থাকেন। আর বলেন, ‘এই যে আমার বাবা। ওর কিছু হয় নাই। বাবা আইবো।’
হাসান খান বলেন, ‘পোলাডারে কয়দিন আগে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাইছি। পোলাডা আমার কই? আল্লাহ তুমি পোলাডারে খুঁইজ্জা দেও।’ এই বলে কান্না জুড়ে দেন তিনি।
এদিকে রুহানের কোনো খোঁজ না পেয়ে তাঁর ডিএনএ টেস্টের জন্য শার্ট আনা হচ্ছে বলে জানান তাঁর বাবা হাসান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরান ঢাকার চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় গতকাল বুধবার রাতে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন। তারা বলেন, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এসময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গের তথ্য অনুযায়ী লাশের সংখ্যা ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে।