একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

Looks like you've blocked notifications!
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি : ফোকাস বাংলা

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ভাষাসৈনিকদের অবদান ও তাঁদের সংগ্রামমুখর দিনগুলোকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ বাজানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পরে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেয়র সাঈদ খোকন এবং এরপর উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদ বেদীতে।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এরপর শহীদ বেদীতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল, আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক, ভাষা সৈনিকবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ, বিদেশি সংস্থার প্রধানগণ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

সেক্টর কমান্ডাররা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান তাঁকে স্বাগত জানান।

মধ্যরাত থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। ভোর হলে পুরো রাজধানীবাসীর ঢল নামে শহীদ মিনারে। তারা প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির বাণী

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলাভাষীসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণ ও জাতিগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। আমি স্মরণ করি সকল ভাষা সংগ্রামীকে, যাঁদের দূরদৃষ্টি, অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি পায় মাতৃভাষার অধিকার।’

আবদুল হামিদ বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই আমাদের জুগিয়েছে স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস। ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসে বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ বিশ্বে বিরল ঘটনা। ১৯৯৯ সালে কয়েকজন মাতৃভাষাপ্রেমী বাঙালির প্রাথমিক উদ্যোগে এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ ও ঐকান্তিক চেষ্টায় জাতিসংঘ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ ছিল বাঙালি হিসেবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। যথাযথ চর্চা, সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিশ্বে আজ বহুভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব মাতৃভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ অর্জন করতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বিশ্বের বিকাশমান ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার গবেষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে ২০০১ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও উন্নয়নে তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইউনেস্কো ২০১৯ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব ইনডিজিনাস ল্যাঙ্গুয়েজেস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘ইনডিজিনাস ল্যাঙ্গুয়েজেস ম্যাটার ফর ডেভেলপমেন্ট, পিস বিল্ডিং অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’,  যা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও কৃষ্টি সংরক্ষণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব- মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই কামনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী

মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সেই রক্তস্নাত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছেন, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশা আল্লাহ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে গত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। যার ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজ সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের ২৬ কোটিরও বেশি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য আমরা ইতিমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। আমরা বিশ্বের সকল ভাষা সংক্রান্ত গবেষণা ও ভাষা সংরক্ষণের জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার থেকেই তাঁর দিকনির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদরা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত, শফিউদ্দিন, সালামসহ আরো অনেকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ, তমুদ্দুন মজলিস ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেপ্তার হন। ১৫ মার্চ তাঁরা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

প্রধানমন্ত্রী এ দিনে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি ও বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সব ভাষা সৈনিকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

২১ ফেব্রুয়ারি আজ জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি

রাত ১২টা ১ মিনিটে (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন।

এ ছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার এক বিবৃতিতে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সব কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দলের নেতাকর্মীসহ সংগঠনের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএনপির কর্মসূচি

২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন। একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৬টায় কালো ব্যাজ সহকারে বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের জমায়েত এবং আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে যাত্রা এবং শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও ভাষাসৈনিকরা আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সারাদেশে বিএনপির জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানাসহ বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে সকাল ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং স্থানীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। দেশব্যাপী দলের বিভিন্ন ইউনিট স্থানীয় ব্যবস্থানুযায়ী ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি

আজ সকাল ৬টা ৩০মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। বাদ জোহর অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত।

এ ছাড়া দিবসটি যথাযোগ্য মর্যদায় উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শিশু একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।