আগামীবার ইজতেমা একত্রে করার উদ্যোগ নেবে সরকার
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভেভাকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী বছরে ইজতেমা একত্রে করার বিষয়ে উদ্যোগ নেবে সরকার। আজ সোমবার ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
আগামী বছর দুই পক্ষ যেন একত্রে ইজতেমা অনুষ্ঠান করতে পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়, এমন আশা প্রকাশ করেন ইজতেমা ময়দানে হাজির হওয়া মুসল্লিদের অনেকে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে তাবলিগ জামাতের বিভেদ, এটা আমরা কোনোমতেই গ্রহণ করতে পারি না। যারা এই বিভেদ দূর করে আমাদের এক জায়গায় ইজতেমা করে দিয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদের ভালো করেন। প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। এখানে এত সুন্দরভাবে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করেছে আমি এর আগে প্রশাসনকে এত সুন্দরভাবে কাজ করতে দেখি নাই।’
শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ইজতেমা কিন্তু একটা। জিম্মাদারি দিছি আগে একজনকে, তিনি ছিলেন হজরত মাওলানা জোবায়ের সাহেব। তাঁর সঙ্গে আমাদের যে ধরনের কথা হয়েছিল, উনারা উনাদের প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তারপরে জিম্মাদারি দিছি মাওলানা ওয়াসিফ (সাদ অনুসারী) সাহেবকে। উনারাও উনাদের কথার ওপরেই আছেন, কোনো রকম বাধা-বিঘ্নতা বা প্রতিবন্ধকতা দেখি নাই।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা করার ব্যাপারে আমরা সরকার এবং যাদের মাধ্যমে করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে একসঙ্গে ইজতেমা করার বিষয়ে আজ সোমবার টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
সাদের অনুসারী ও তাবলিগের এদেশীয় জিম্মাদার মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, ‘দেখতে বাহ্যিকভাবে একসঙ্গে, একই প্যান্ডেলের নিচে, সময়ও কাছাকাছি, কিন্তু তারপরও আসলে ভিন্ন। তার কারণ আদর্শগত ভিন্নতা আমাদের ভিন্ন করে দিয়েছে, যেটা বাস্তবতা। যে কারণে এই ইজতেমার শ্রোতাও ভিন্ন, বক্তাও ভিন্ন, দোয়াও ভিন্ন এবং আদর্শও ভিন্ন। দাওয়াতে তাবলিগে আগে যে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল, সেটা তো নেই। এখনো যে আশঙ্কামুক্ত তা বলব না। এসব কারণে দেশে সাধারণ মুসল্লিরা যে আবেগ নিয়া সবাই ভিড় করত সেটার ভেতর একটা ভাটা পড়ছে।’
এই থেকে উত্তরণ চান উল্লেখ করে মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, 'আমরা চাই যে এ ধরনের একটা ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে, এটা থেকে উত্তরণ চাই আমরা। সে উত্তরণের স্বার্থে আমরা সব সময় শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম, একসঙ্গে আমরা বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে ইজতেমা করতে কখনো রাজি না। আদর্শ ভিন্ন রাইখা একসঙ্গে করতে যাওয়া মানেই তো সংঘাতকে ডেকে আনা। যদি আদর্শ এক হয়ে যায়, যেরকম আগে যেমন এক মার্কাজে একসঙ্গে ছিল তারা যদি তাদের ভুল বুঝতে পারে যে আমাদের এ ধরনের সংঘাতে যাওয়া ক্ষতি হচ্ছে, মুসলমানের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে আগে যেমন মাওলানা সাদ সাহেবের নিজামুদ্দিন পরিচালিত হতো তাহলে তো একসঙ্গে হওয়ার সেকাল আছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প যে দুই আদর্শ একসঙ্গে জমা হবে, এটাও কেউ ভাবতেও পারে না, এটা সঠিকও নয়।’
আশরাফ আলী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ যেন আগামী বছর থেকে আজীবন ইজতেমায় বয়ান করতে পারেন, আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতে পারেন এবং ইজতেমার যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় আরো কথা বলেন বিদেশি মুসল্লিদের জিম্মাদার রেজা আরিফ, তাবলিগের মুরুব্বি আব্দুল্লাহ শাকিল প্রমুখ।
বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ ও কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়েরের অনুসারী মুসল্লিদের মধ্যে বিরোধ এবং সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত হয়ে যায়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মুসল্লি নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়। পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুই পক্ষের মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা জোবায়ের এবং ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সাদ অনুসারীদের ইজতেমা করার কথা। কিন্তু জোবায়েরের অনুসারীরা একদিন আগেই ১৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা শুরু করে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে গত শনিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে তাদের ইজতেমা শেষ করে।
আর বৈরী আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় মাওলানা সাদ অনুসারীদের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্যায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ইজতেমার মাঠ গোছানোর সময়ের স্বল্পতার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমার সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ পর্যায়ের আখেরি মোনাজাত পূর্ব নির্ধারিত সোমবারের পরিবর্তে একদিন পিছিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা।
এদিকে কড়া নিরাপত্তা আর প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে সাদপন্থী মুসল্লিরা দ্বিতীয় দিন পার করছেন। ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি, মোটর টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান বলেন, গতকালের বৃষ্টির কারণে সরকার দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত একদিন পিছিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মোনাজাতের জন্য নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা আগের মোনাজাতের সময়ের মতোই নেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে কারো অসুবিধা না হয় সেই ব্যাপারে আমরা খেয়াল রাখব।
বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচলে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আখেরি মোনাজাতে আব্দুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস এবং মীরের বাজার থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত উভয়মুখী মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহান চলাচল বন্ধ থাকবে। ইজতেমার মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত মেনে আখেরি মোনাজাতের পর ইজতেমাস্থল ত্যাগ করবেন মুসল্লিরা।