কিশোরগঞ্জে দুই তরুণীকে হত্যার দায়ে কনস্টেবলসহ দুজনকে ফাঁসি
কিশোরগঞ্জে দুই তরুণীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ দুজনকে ফাঁসি ও ১৪ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয় আসামিকে চার বছর করে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক কিরণ শংকর হালদার আজ রোববার দুপুরে এ রায় দেন।
ফাঁসি ও ১৪ বছর সাজা পাওয়া দুই আসামি হলেন পুলিশ কনস্টেবল নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মনির ওরফে হলুদ ওরফে সুজন ও ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ব্যবসায়ী শামীম হাওলাদার ওরফে জহির।
এ ছাড়া শামীমকে এক লাখ টাকা ও মনিরকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে উভয়কে অতিরিক্ত ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দিলবর হোসেন, জয়নাল আবেদীন, মোস্তফা মীর রানা, বাবুল মিয়া, আবুল হোসেন ও কবীর হোসেন শান্তকে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে অতিরিক্ত ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এই ছয় আসামির সবাই নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এবং ঢাকায় কারওয়ানবাজারে একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী ছিলেন।
রায় ঘোষণার সময় দিলবর হোসেন, জয়নাল আবেদীন ও মোস্তফা মীর রানা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া দুজনসহ বাকি পাঁচ আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মুঠোফোনে আলাপের সূত্র ধরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা ও দুই বান্ধবী আফরোজা আক্তার সুমী (১৯) ও আফরোজা আক্তার ঊর্মির (২১) সঙ্গে মনিরুজ্জামান মনির ও শামীম হাওলাদার ওরফে জহিরের ঘনিষ্ঠতা হয়। এর সূত্র ধরে মনির ও শামীম ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই কিশোরগঞ্জ এসে সুমী ও ঊর্মিকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যান। পরে ঢাকায় কারওয়ানবাজারের হোটেল ওয়েস্টার্ন গার্ডেনের কক্ষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। দুদিন পর পুলিশ এফডিসির কাছে হাতিরঝিল থেকে ঊর্মি ও তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন রেলগেটের কাছ থেকে থেকে সুমীর লাশ উদ্ধার করে।
২০০৮ সালের ১৫ জুলাই লাইব্রেরি থেকে গাইড বই আনার কথা বলে আফরোজা আক্তার সুমী বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়ি ফিরে না আসায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁর বাবা মো. আবু বাক্কার ২২ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং ঢাকায় র্যাব সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরে আবু বাক্কার ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যাসহ অপহরণের মামলা করেন।
এরপর পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে। মুঠোফোনে কল রেকর্ডের সূত্র ধরে প্রথমে ঝালকাঠি থেকে শামীম হাওলাদার ওরফে জহিরকে ও পরে ময়মনসিংহ থেকে পুলিশ বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল মনিরুজ্জামান মনিরকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর উভয় আসামি দুই তরুণীকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং ঘটনায় জড়িত বাকিদের কথা পুলিশকে জানান। তাঁরা জানান, দুজনকে হত্যার পর লাশ দুটি সবজির ঝুড়িতে ভরে একটি ঝুড়ি ঝিলের পানিতে এবং অপর ঝুড়ি তেজগাঁও রেল গেটের পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দেন।
দুজনের স্বীকারোক্তির পর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমজাদ হোসেন ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ১-এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ১-এর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল জানান, হত্যা ও অপহরণের পৃথক অপরাধের কারণে মূল দুই আসামিকে ফাঁসির পাশাপাশি ১৪ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট সাইফুল হক সাজন ও অ্যাডভোকেট মো. সিরাজ উদ্দিন মামলা পরিচালনা করেন।