বয়ানে উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
বুধবার গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা সভায় বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ছবি : এনটিভি

ইজতেমার মাঠে বয়ানে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে বারণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

এবারের বিশ্ব ইজতেমার তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষের মুরুব্বি ও মুসল্লিদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কেউ ইজতেমার বয়ানে কিংবা মাঠের মধ্যে কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না। আমি বার বার অনুরোধ করছি উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না। তারপরও কেউ ভুলেও যদি উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়দানে আমাদের সাদা পোশাকে যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তাবাহিনী সজাগ থাকবেন। আপনাদের সেবার জন্য মন্ত্রী, এমপি, এসপি, আমরা সবাই প্রস্তুত আছি।

স্বরাষ্ট্রতিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী আগের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ, অনেক দক্ষ। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা  করতে পারে। কোনো অপপ্রচারও যদি কেউ করে থাকে তাকে আমরা এখন তাৎক্ষণিক সনাক্ত করতে পারছি। তাই সবাইকে অনুরোধ করব কেউ আপনারা উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করবেন না, সে-টা ফেসবুক হোক আর সম্মুখে হোক। সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার জন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি রয়েছে। 

আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, তাবলীগ জামাতের দুইপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বয়ানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার উসকানিমূলক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য মুরুব্বিদের প্রতি অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠান অন্যদের মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আহমেদ, গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা ইজতেমা মাঠে তাদের প্রস্তুতির অগ্রগতি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে তাবলিগের দুইটি মারকাজের তালিকা ও অনুরোধ অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভিসা সহজীকরণের আশ্বাস দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই মারকাজের লিস্ট অনুযায়ী যারা যারা ভিসার আবেদন করবেন তাদের সবাইকে ভিসা দিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতে যে আমাদের রাষ্ট্রদূত আছে তাঁকে আমরা বলে দেব। এছাড়া পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে যদি কোনো মুসুল্লির ব্যাপারে রিকুয়েস্ট থাকে তা আমাদের জানাবেন। আমরা ভিসার ব্যবস্থা করব।

উদাহরণ টেনে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এক আমেরিকান ও আফ্রিকান একটি দেশের মুসুল্লিকে ভিসা দেওয়ার কথা বলেন। এ ধরনের অনুরোধ থাকলে লিখিতভাবে জানাতে বলেন তিনি। বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব যাতে তাদের ভিসার কোনো অসুবিধা না হয়।’

আপত্তিকর পোস্টার অপসারণ, মাঠে পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় মেয়র ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি মুরুব্বিদের উদ্দেশে বলেন, দুই পক্ষের সমঝোতা স্মারক অনুয়ায়ী আপনারা চলবেন। ইজতেমায় কে আসবেন, কে আসবেন না, তা আগেই কথা হয়েছে। এসব নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। মন্ত্রণালয়ে সেই দিনের (দুই পক্ষের) ডিসিশন অনুযায়ী আপনারা লিস্ট পাঠান, আমরা ভিসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সে দিনের কথা অনুযায়ী যারা ইজতেমায় আসতে চান নাই, তারা আসবেন না। তারপর আপনারা যদি মনে করেন আরো কাউকে আনতে হবে, আমাদের কাছে লিস্ট পাঠান, আমরা তার ব্যবস্থা করব। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুই পক্ষের মুসুল্লিরা মাঠে আসবেন এবং মাঠ ত্যাগ করবেন। মাঠে নিরাপত্তা রক্ষায় ১৯ সদস্যের একটি নিরাপত্তা সেল গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে মাঠ প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আগামী দুইদিনের মধ্যে তা শেষ হয়ে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইজতেমায় সরকার কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। সব সিদ্ধান্ত আপনারা নেবেন, সবকিছু আপনারা করবেন। আমরা বাইরে থেকে আপনাদের যা যা প্রয়োজন তা আমরা ব্যবস্থা করব। আপনাদের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। আপনারা শুধু ওয়াদা পালন করুন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমা নিশ্চিত করা কঠিন চ্যালেঞ্জ, কঠিন শপথ নেওয়া হয়েছে। ইজতেমা নিয়ে সরকারের ইমেজ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেন, এবারের ইজতেমা অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় এবারের ইজতেমার বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, ইজতেমা মাঠের সব প্রস্তুতি সুসম্পন্ন হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, তুরাগ নদ পারাপারে পন্টুনব্রিজ নির্মাণসহ সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইজতেমাকালে গাজীপুরের মূলসড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সড়কে যাতে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ইজতেমায় অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এবার ইজতেমা এলাকার ‘নিরাপত্তার চোখ’ সিসি ক্যামেরা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও বেশি মোতায়েন থাকবে। থ্রেড কি আছে তা মাথায় নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি দুই পক্ষের ১০ দফা সমঝোতা স্মারক মেনে চলার অনুরোধ করেন।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ইজতেমা শুরুর ১৫দিন আগে থেকেই  ইজতেমা এলাকায় ব্যাপক নজরদারি শুরু করা হয়েছে। ইজতেমায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যদের তৎপরতা বাড়ানো হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। তিনি মোনাজাতের পর মুসুল্লিদের সুশৃঙ্খলভাবে মাঠ ত্যাগ করতে মূল মঞ্চ থেকে মুরুব্বিদের ঘোষণা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

পর্যালোচনা সভায় মাওলানা জুবায়ের ও সাদপন্থী মুরুব্বিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

আগামী শুক্রবার থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে চার দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। ইজতেমার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের ও দিল্লীর মাওলানা সাদপন্থী মুরুব্বি ও মুসুল্লিরা আলাদাভাবে ইজতেমা আয়োজন করছেন এবার। জুবায়েরপন্থীরা শুক্রবার ইজতেমা শুরু করে পরদিন শনিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ করবেন। দিল্লির মাওলানা সাদপন্থীরা রোববার ইজতেমা শুরু করবেন এবং পরদিন সোমবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করবেন।