জাল সনদে ডাক্তারি, বেতন নিতেন এক লাখ ১০

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেডে চাকরি করা ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা। ছবি : এনটিভি

পাবনার ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামক ক্লিনিকে গত সাত বছর ধরে আলট্রাসনোলজিস্ট এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হিসেবে কাজ করেছেন। এ জন্য তিনি প্রতি মাসে বেতন পেতেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এভাবে গত ৭ বছরে শুধু ওই ক্লিনিক থেকেই ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ক্লিনিকের বাইরে রোগী দেখে আয় করেছেন কয়েক কোটি টাকা।

এত টাকা উপার্জন করলেও তিনি ছিলেন ভুয়া চিকিৎসক। তিনি অন্য চিকিৎসকের সনদ ও বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। তাঁর বিএমডিসির নিবন্ধনই শুধু জাল নয় বিএমএর সদস্য পদও জাল।

ওই ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানাকে নীলফামারী থেকে আটক করেছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।

পুলিশ সুপার জানান, আটক ভুয়া চিকিৎসকের আসল নাম মাসুদ রানা। তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার হাতিখানা পাড়া গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে। সৈয়দপুর পুলিশের সহায়তায় সোমবার বিকেলে তাঁকে আটক করে পাবনার পুলিশ। আটকের পর তাঁকে সৈয়দপুর থেকে পাবনায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ স্বীকার করেছেন, তিনি ভুয়া চিকিৎসক। ডা. মাসুদ করিমের নামসহ কাগজপত্র জাল করে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন। এ ঘটনায় ভাঙ্গুড়া থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

আটক ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা ২০১১ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছর ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড ক্লিনিকে মাসিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেতনে কর্মরত থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) পাবনা শাখার আজীবন সদস্যও ছিলেন। ঢাকার চিকিৎসক ডা. মাসুদ করিমের নাম, বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ও সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন মাসুদ রানা। বন্ধু চিকিৎসকের মাধ্যমে ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি জানতে পেরে পাবনায় আসেন প্রকৃত চিকিৎসক ডা. মাসুদ করিম। আর তার আগেই ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে পালিয়ে যান ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকৃত ডা. মাসুদ করিম বর্তমানে ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা, তাঁর রয়েছে নিজস্ব চেম্বার। ময়ময়নসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ চিকিৎসক এসবিবিএস পাস করেন ২০০১ সালে। অথচ তাঁর নাম ও বিএমডিসি সনদ ব্যবহার করে সাত বছর ধরে ভাঙ্গুড়ার হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামে ওই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আরএমও এবং আলট্রাসনোলোজিস্ট  চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন অন্য এক ব্যক্তি।

প্রকৃত চিকিৎসক ডা. মাসুদ করিম জানান, তাঁর বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ৩৩৩৬০। স্থায়ী ঠিকানা: ফেনীর সোনাগাজী। বাবার নাম আবদুস শাকুর। তাঁর নামে জালিয়াতির বিষয়টি শুনে পাবনায় ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জন্য খুবই অপমানজনক। ঘটনাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় মৌখিকভাবে জানিয়েছি। পাবনা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। আইনি ব্যবস্থা নিতে ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের পরিচালক আবদুল জব্বার বলেন, মাসুদ রানাকে মাসে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো। এমনকি তিনি পাবনা বিএমএর আজীবন সদস্য। এর আগে পাবনার বিভিন্ন ক্লিনিকে তিনি চাকরি করেছেন। কখনো মনে হয়নি তাঁর যাবতীয় সনদ জাল। তবে এখন শুনছি তিনি ভুয়া চিকিৎসক।

বিএমএ পাবনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল মাসুদ বলেন, ওই ভুয়া চিকিৎসককে কাগজপত্র জাল করতে নিশ্চয়ই বিএমডিসির কেউ সহযোগিতা করেছে। তাদের খুঁজে বের করা দরকার। তাদের দাবি, ভুয়া চিকিৎসকেকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হালিমা খানম বলেন, ‘ঘটনা জানার পর পরই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। সত্যতা যাচাই করেছি। কাগজপত্র আনার কথা বলে ওই ভুয়া চিকিৎসক পালিয়েছিলেন। এখন ধরা পড়েছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’