ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি একাদশ জাতীয় সংসদে আবারও সংসদ উপনেতা মনোনীত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ উপনেতা হলেন তিনি।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারী। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ায় তাঁর রয়েছে বিশেষ অবদান। দুঃসময়ে তিনি ভরাট কণ্ঠের স্লোগানে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।

সাজেদা চৌধুরী ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো উপনেতা নির্বাচিত হন।

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর আংশিক) থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর স্বামী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর আকবর চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে ১৯৫৬ সাল থেকে এক সাধারণ তরুণী সাজেদা চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১১ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্ল গাইডসের ন্যাশনাল কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর তিনি এবং সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মিলে আওয়ামী লীগকে নতুন করে গড়ে তোলেন। দলের নানা মতপার্থক্যের মধ্যেও শেখ হাসিনার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য রেখেছেন। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার ব্যাপারেও তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন। একই সময় তিনি বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।