সেই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা

Looks like you've blocked notifications!
তরুণীকে সরকারি ডাকবাংলোয় আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে প্রত্যাহার হওয়া সাটুরিয়া থানার এসআই সেকেন্দার হোসেন (বাঁয়ে) ও এএসআই মাজহারুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার দুই পুলিশ সদস্য ডাকবাংলোয় এক তরুণীকে আটকে রেখে ইয়াবা খাইয়ে ধর্ষণ করেছেন বলে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি। এরপর ওই তরুণী সোমবার রাতে সাটুরিয়া থানায় ওই দুই পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন।

আসামিরা হচ্ছেন সাটুরিয়া থানার প্রত্যাহার হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও এএসআই মাজহারুল ইসলাম।

মামলা হওয়ার পর রাতেই ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমান জানান, সোমবার রাত সাড় ৮টার দিক ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার সময় তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গাইনী কনসালটেন্ট নাসিমা আক্তার, ডেন্টাল সার্জন রফিকুল ইসলাম,  রেডিওলজিস্ট হেলাল উদ্দিন ভূইয়া। চার সদস্য বিশিষ্ট এই মেডিকেল বোর্ড দ্রুত সময়ের মধ্য একটি প্রতিবেদন দেবে।

এদিকে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান জানান, ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ওই তরুণী বাড়ি চলে গেছেন।

গত রোববার পুলিশ সুপারের কাছে ওই তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দীকী বিষয়টি নিয়ে সোমবার তদন্ত করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান জানান, সাটুরিয়া থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় নিয়ে আজ তদন্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী তাঁর ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। দিনভর প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ওই তরুণী পুলিশ সুপারের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তাঁর সত্যতা রয়েছে। এ ব্যাপারে ওই তরুণী সাটুরিয়া থানায় এসআই সেকেন্দার হোসেন ও এএসআই মাজহারুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করবেন সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ। ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণের জন্য ওই তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষাসহ প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা হবে। অপরাধীকে পুলিশ সদস্য হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ধর্ষণ মামলার আসামিরা বর্তমানে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এসআই সেকেন্দার হোসেন ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় এক নারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে জমি কিনেন। কথা ছিল জমি বিক্রির লাভ তাঁকে দেওয়া হবে। সেই হিসেবে তিনি সেকেন্দার হোসেনের কাছে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে ঘুরাতে থাকেন। সাটুরিয়া থানায় বদলি হয়ে আসার পরও সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই নারী।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেশী ভাগ্নিকে নিয়ে সাটুরিয়া থানায় যান ওই নারী। এর পর সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা দিবে বলে তাদের সাটুরিয়া ডাকবাংলোতে নিয়ে যান। সন্ধ্যার পর সাটুরিয়া থানার এএসআই মাজহারুল ইসলামকে ডাকবাংলোতে নিয়ে যান সেকেন্দার হোসেন। সেখানে ডাকবাংলোর একটি কক্ষে দুই পুলিশ সদস্য ইয়াবা সেবন করেন ও ওই তরুণীকে জোর করে ইয়াবা সেবন করান। এরপর তারা তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। পরদিন শুক্রবার তরুণীকে ছেড়ে দেন। এরপর ওই তরুণী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

ওই তরুণী জানান, মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে রোববার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর সোমবার বিকেলে পুলিশের তদন্ত কমিটি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি কিভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দেন।

ওই তরুণী আরো জানান, পুলিশ সুপারের কারণে তিনি এখন ন্যায়বিচার পেতে যাচ্ছেন।