স্ত্রী পরকীয়া করায় মেয়েকে হত্যার পর লাশ পাতিলে!

Looks like you've blocked notifications!
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বাবার হাতে হত্যার শিকার শিশু মনিরা খাতুন। ছবি : এনটিভি

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় স্ত্রীর পরকীয়ার সন্দেহে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মেয়েকে গলাটিপে হত্যার পর লাশ খাটের নিচে পাতিলে লুকিয়ে রেখেছিল এক ব্যক্তি। রফিকুল ইসলাম নামের সেই ব্যক্তিকে আজ সোমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জয়দেবপুর রেলগেইট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত শিশু মনিরা খাতুন শ্রীপুরের হাজি মোহাম্মদ আলী প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে শ্রেণিতে পড়ত। সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের মা নাসরিন আক্তার।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া রফিকুল স্বীকার করেছেন, পারিবারিক কলহের জেরে গতকাল রোববার বিকেলে রুমাল দিয়ে ঘুমন্ত মেয়ে মনিরার মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর লাশ ঘরের খাটের নিচে থাকা পাতিলে লুকিয়ে রাখেন। একাধিক পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হতে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে রফিকুল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান ও স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সালে শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা এলাকার গোলাপ হোসেনের মেয়ে নাসরিন আক্তারের সঙ্গে কাপাসিয়া উপজেলার চাপাত এলাকার মাঈন উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। এটি ছিল নাসরিনের তৃতীয় বিয়ে। বিয়ের পর এ দম্পতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। ২০১৪ সালে রফিকুল ওমান চলে যান। সেখানে থাকাবস্থায় মেয়ে মনিরার জন্ম হয়।

এদিকে নাসরিন অন্য এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ খবর শুনে ওমান থেকে দেশে ফিরে আসেন রফিকুল। দেশে ফেরার পর পরকীয়ার সন্দেহে রফিকুল ও নাসরিনের মধ্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকতো। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে রফিকুলকে ছেড়ে এক সহকর্মীর সঙ্গে পালিয়ে যান নাসরিন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় শিশুমেয়েকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাবা রফিকুল ইসলাম। ছবি : এনটিভি

এদিকে আর কোনো ছেলের সঙ্গে পরকীয়া করবে না স্বীকারোক্তি দিয়ে রফিকুলের কাছে ফিরে আসেন নাসরিন। গত ১ ডিসেম্বর তাঁরা শ্রীপুরের ডেনিমেক পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে স্থানীয় কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (মাস্টারবাড়ী) এলাকার ইয়াছিন হাজির ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। এদিকে কারখানার এক সহকর্মীর সঙ্গে আবার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নাসরিন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছিল।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রফিকুল গত ৮ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কাপাসিয়ার চাপাত গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরে সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে শনিবার বিকেলে কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার ভাড়া বাড়িতে আসেন রফিকুল। ওইদিন নিজ সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।

গতকাল রোববার সকালে স্ত্রী কারখানায় গেলেও অসুস্থতার কথা বলে রফিকুল বাসায় থাকেন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে নাসরিন দুপুরে বাসায় গিয়ে মেয়ে ও স্বামীর সঙ্গে একত্রে খাওয়া-দাওয়া করে আবার কারখানায় চলে যান। এরপর রফিকুল তাঁর মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে রফিকুল রুমাল দিয়ে ঘুমন্ত মেয়ের মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে করে হত্যা করেন। পরে লাশ ঘরের খাটের নিচে রাখা পাতিলে লুকিয়ে রেখে বাসা থেকে বের হয়ে যান বলে জানান এসআই মাহমুদুল হাসান।

এদিকে বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটির পর নাসরিন বাসায় ফিরে মেয়েকে না দেখে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। শেষমেশ কোথাও না পেয়ে বাইরে অবস্থান করা স্বামী রফিকুলের মোবাইলে ফোন করে মেয়ের খোঁজ জানতে চান তিনি। তখন রফিকুল বলেন, ‘আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। আমাদেরকে আর পাবি না।’

এরপর ঘটনাটি পুলিশকে জানান নাসরিন আক্তার। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায় ও তল্লাশি চালায়। তল্লাশির একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে নাসরিনের ঘরের খাটের নিচে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভেতর লুকিয়ে রাখা অবস্থায় শিশু মনিরার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম।

এরপর শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকে রফিকুল ইসলাম পলাতক থাকেন। পুলিশ তাঁর খোঁজে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে সোমবার সকালে জয়দেবপুর রেলগেইট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।