৫ ছাত্র-যুব নেতার একসঙ্গে জানাজা, শোকস্তব্ধ গোপালগঞ্জ

Looks like you've blocked notifications!
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গোপালগঞ্জের পাঁচ ছাত্র ও যুবনেতার লাশ আজ সোমবার সকালে তাঁদের বাড়ি পৌঁছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ছবি : এনটিভি

খুলনার লবণচরা থানা এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা নিহতের ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা শহরজুড়ে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে; নিহতদের বাড়ি বাড়ি চলছে শোকের মাতম।

আজ সোমবার বাদ জোহর শহরের শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি ফুটবল স্টেডিয়ামে পাঁচ ছাত্র ও যুবনেতার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের আশপাশ থেকে লোকজন জড়ো হচ্ছেন। জানাজা শেষে আজকেই তাঁদের দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিকভাবে জানানো হয়েছে।

গতকাল রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে লবণচরা থানার রূপসা বাইপাস সড়কের খেজুরবাগান এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মনিরুজ্জামান মিঠু।

নিহতরা হলেন—গোপালগঞ্জ শহরের সবুজবাগ এলাকার অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে ও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব হাসান বাবু (২৪), একই এলাকার মৃত আলাউদ্দিন শিকদারের ছেলে ও গোপালগঞ্জ সদর যুবলীগের সহসভাপতি এস এম সাদিকুল আলম সাদিক (৩৮), থানাপাড়ার গাজী মিজানুর রহমান হিটুর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের উপসম্পাদক গাজী ওয়ালিদ মাহমুদ উৎসব (২৫), কুয়াডাঙ্গা এলাকার রসুলপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন মোল্লার ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সাজু আহমেদ (২৪) এবং চাঁদমারী এলাকার ওয়াহিদ গাজীর ছেলে ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অনিমুল ইসলাম গাজী (২৫)।

প্রাইভেটকারটি সাদিকের ব্যক্তিগত। তিনিই সেটি চালাচ্ছিলেন। নিহতদের মধ্যে চার ছাত্রলীগ নেতার সবাই গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র। এর মধ্যে মাহবুব হাসান বাবু স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের, অনিমুল স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের, সাজু উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং উৎসবও একই কলেজের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উৎসব ও অনিমুল পরস্পরের আত্মীয়, সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।

আজ সোমবার ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে তাঁদের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জ শহরে নিয়ে আসা হয়। লাশগুলো রাখা হয় গোপালগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে। আগে থেকেই সেখানে ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সেখান থেকে লাশগুলো পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তাঁদের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। আশপাশ থেকে ছুটে আসা প্রতিবেশীদেরও চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়।

নিহতদের বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীরা জানান, এরা পাঁচজন বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন। মাঝেমধ্যে তাঁরা বেড়াতে যেতেন। গতকাল সন্ধ্যার পর খুলনায় বেড়াতে যান। ফিরে আসার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হন।  

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি খুলনা শহরের জিরো পয়েন্টের দিকে আসছিল। আর প্রাইভেটকারটি বিপরীত দিক রূপসা ব্রিজে যাচ্ছিল। খেজুরবাগান এলাকায় একজন পথচারী প্রাইভেটকারটির সামনে পড়ে যায়। তখন প্রাইভেটকারটি পথচারীকে সাইড দিতে গিয়ে ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়ে।’

‘এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে লাশ উদ্ধার করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনার পর থেকে ট্রাকচালক পলাতক।