অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও গ্যাটকোকে কাজ দেওয়া হয় : পিপি কাজল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত ৩-এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান।
এর আগে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরাতন কারাগার থেকে পুলিশি পাহারায় আদালতে হাজির করা হয়। সে সময় গৃহকর্মী ফাতেমা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন। এর পরে খালেদা জিয়া তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। প্রায় পাঁচ মিনিট কথা বলা শেষে আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
শুনানির প্রথমে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, এ মামলায় আলামত জব্দ করার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তাই মামলার কার্যক্রম পেছান হোক। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক দুদকের আইনজীবীকে অভিযোগ শুনানি করার নির্দেশ দেন।
এরপর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান মোশাররফ হোসেন কাজল।
অভিযোগে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ২০০৩ সালের ১ মার্চ ওই সময়ের সরকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা আইসিডি টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে।
দরপত্রে অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল, শুধু অভিজ্ঞ ইকুইপমেন্ট ওনার্স, ইকুইপমেন্ট সাপ্লায়ার্স, ইকুইপমেন্ট ইউজার্স, ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং ফার্ম এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বন্দর ব্যবহারকারীরা এ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে। শর্ত অনুযায়ী টেকনিক্যাল বিডের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও এর পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার দলিল অবশ্যই থাকতে হবে এবং অভিজ্ঞতাসংবলিত প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারির পর টেন্ডারে অংশগ্রহণের জন্য কোনোরূপ ইকুইপমেন্টের ওনার, ইউজার, ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং ফার্ম হিসেবে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা এবং পূর্বাপরে বন্দর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বনানীর জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর বাড়ির গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) কাজ দেওয়া হয়। এর জন্য ওই সময়ের নৌপরিবহনমন্ত্রীর পুত্র সায়মন ও তার মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে নিয়মিত অবৈধ অর্থ প্রদান করেন। গ্যাটকোর পরিচালকদের কারোই টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা শাহজাহান এস হাসিব নামের এক ব্যক্তিকে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দেখিয়ে টেন্ডারের শর্ত পূরণের চেষ্টা চালান।
শুনানিতে কাজল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ৪০৯, ১০৯ এবং ৫ (২) ধারায় অভিযোগ করার জন্য নিবেদন করেন। পরে বিচারক আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য করেন।
২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করে জামিন পান।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা করেন। পরে ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জহিরুল হুদা।
মামলার ২৪ আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও জামায়াতনেতা মতিউর রহমান নিজামী মারা গেছেন। আসামির সংখ্যা এখন ২০ জন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোর সঙ্গে চুক্তি সইয়ের ফলে সরকারের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া গ্যাটকোকে ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার বিনিময়ে অবৈধভাবে আরাফাত রহমান কোকো ও ইসমাইল হোসেন সায়মন দুই কোটি ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৬ টাকার আর্থিক সুবিধা নেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।